Monday, May 23, 2011

‘আমআদমি’র দু’বছর! দ্বিতীয় ইউ পি এ জোট সরকারের দেশশাসন দু’বছর পেরিয়ে তিন-এ পা দিল।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=6454

'আমআদমি'র দু'বছর

দ্বিতীয় ইউ পি এ জোট সরকারের দেশশাসন দু'বছর পেরিয়ে তিন-এ পা দিল। দু'বছর আগে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে 'আম-আদমির' সরকারকে নির্বাচিত করেছিল দেশের জনগণ। এই দু'বছরের মধ্যে প্রত্যাশা পূরণের পথে কতটা এগোতে পেরেছে মনমোহন সিংয়ের সরকার? দেশের দারিদ্র্য ও বেকারী রোধে সরকার কী আদৌ কোন ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? বর্তমান সরকারের নীতি ও কাজ সম্পর্কে কী অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন দেশের মানুষ? ক্ষমতায় বসেই দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার বলেছিল, সময়সীমা ধরে সব কাজ হবে। মন্ত্রীদের ১০০ দিনের কাজের রিপোর্ট দিতে হবে। ঐ রিপোর্ট কার্ডের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। প্রথম ১০০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি মন্ত্রক সাংবাদিকদের ডেকে রিপোর্ট কার্ডের চমক সৃষ্টি করেছিল। ঐ প্রথম তিন মাসের পর থেকে কোনমন্ত্রক কী কাজ করলেন তার কোন সরকারী হিসাব দেশের মানুষের কাছে নেই। যদিও মানুষ তার অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারছেন, এসবই নিছক চমক। আসলে দেশকে আরো দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

গত দু'বছরে দেশজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কৃষিপণ্য তথা খাদ্য পণ্যের দামের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার এই মূল্যবৃদ্ধির সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়েছে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ওপর। এফ সি আই'র গুদামে খাদ্যপণ্য নষ্ট হলে‍‌ও তা গরিব মানুষের মধ্যে বিলি করা হয়নি। গণবণ্টন ব্যবস্থা আরো দুর্বল হয়েছে এই দু'বছরে। অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা জিনিসের দাম বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণে মুনাফা লুঠছে। এই সরকারের আমলে পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, কেরোসিনের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে সমস্ত পণ্যের দামের ওপর। কর্মীদের সারাজীবনের সঞ্চয় পেনশনকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অনিশ্চিত শেয়ার বাজারে। নতুন চাকরির কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের কোনরকম সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা হয়নি। বি পি এল তালিকায় ত্রুটির ফলে গরিব মানুষের মধ্যে বিভাজন হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ইউ পি এ'র প্রত্যেকটি বাজেটেই করে ছাড় পেয়েছেন ধনী কর্পোরেট মহল। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের চাপ বাড়ছে। উদারনীতির পথ ধরে চলেছে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার। ফলে বাজারের ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ কমছে। ভরতুকি প্রত্যাহৃত হচ্ছে। এই দু'বছরে ইউ পি এ জোটের কৃতিত্বের তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি। কমনওয়েলথ, আই পি এল, আদর্শ আবাসন, টু জি স্পেকট্রাম প্রভৃতি লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে দ্বিতীয় ইউ পি এ'র আমলে। প্রত্যেকটি দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী, শাসক দলগুলির নেতারা, আমলা ও কর্পোরেট মহল জড়িয়ে গেছে। বিরোধী দলগুলির চাপে এবং শীর্ষ আদালতের আদেশে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটসঙ্গী দলগুলি এই দুর্নীতিগুলিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় ইউ পি এ জোট নিজেদের 'আম-আদমি'র সরকার প্রমাণ করতে পারেনি। বরং এই সরকার ধনীদের স্বার্থবাহী, গরিব সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারেই পরিণত হয়েছে।

ফোন পেয়েই অস্ত্র উদ্ধার
নিয়ে কথা বদল ডি জি-র

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৩শে মে— রাজ্যে তৃণমূলের সরকার হওয়ার পর সি পি আই (এম) কর্মীদের ওপরে হামলার পাশাপাশি পার্টি অফিস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের যে সাজানো ঘটনাপর্ব চলছে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করলো তৃণমূল কংগ্রেস। রবিবার তৃণমূলীদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিস পশ্চিম মেদিনীপুরের পারুলিয়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। শিলদা ই এফ আর ক্যাম্পে মাওবাদীদের হামলায় লুঠ হয়ে যাওয়া একটি ইনসাস রাইফেলও এই অস্ত্রগুলির মধ্যে রয়েছে বলে পুলিস জানায়। এরপরে নতুন সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সরাসরি নির্দেশে রাজ্য পুলিসের ডি জি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় নিজে মহাকরণে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন, সি পি আই (এম)'র প্রভাব থাকা এলাকা থেকে এই অস্ত্র উদ্ধারের ফলে শিলদার ঘটনার তদন্তে 'নতুন অ্যাঙ্গেল' পাওয়া গেলো। শিলদা পুলিস ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় সি পি আই (এম) জড়িত থাকতে পারে। নতুন করে এই ঘটনার তদন্ত করে দেখা হবে। 

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ই এফ আর ক্যাম্পে মাওবাদী সন্ত্রাসবাদীদের আকস্মিক হামলায় ২৪ জন ই এফ আর জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিলেন। মাওবাদীরা হামলা চালিয়ে ক্যাম্প থেকে প্রচুর অস্ত্রও লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার তদন্ত করছে সি আই ডি। তারা বহুদিন আগেই এই হামলার জন্য সুস্পষ্টভাবে মাওবাদীদের দায়ী করেছে, এমনকী প্রায় একবছর আগেই কিষেণজী, শশধর মাহাতো সহ ২৩ জন মাওবাদীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। এতদিন বাদে সেই সব তদন্তের সারবত্তাকেই কার্যত অস্বীকার করে স্বয়ং রাজ্য পুলিসের ডি জি-কে দিয়ে তৃণমূলী সরকার বলালো, ''ওই ঘটনায় সি পি আই (এম) কর্মীরাও যুক্ত থাকতে পারেন।''

সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন সাংবাদিকদের কাছে এই ধরনের অভিযোগের প্রতিবাদ করে এদিন বলেছেন, ''পুলিসকে চাপ দিয়ে বেআইনী অস্ত্রের সঙ্গে আমাদের পার্টি অফিসগুলিকে জড়ানো হচ্ছে। এনায়েতপুরে সি পি আই (এম)'র পার্টি অফিস থেকে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেছে একটি মাঠ থেকে।'' সি পি আই (এম)'র প্রভাব থাকা এলাকা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কারণে সি পি আই (এম)-কে দায়ী করার যে যুক্তি ডিজির চেয়ার থেকে দেওয়া হয়েছে, তারও প্রতিবাদ করে নিরুপম সেন বলেছেন, এটা কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি হতে পারে না। সারা পশ্চিমবঙ্গেই তো সি পি আই (এম)'র প্রভাব রয়েছে। যেখান থেকে অস্ত্র পাওয়া যাবে, তার জন্যই সি পি আই (এম) দায়ী হবে না কি!

রবিবার দুপুরে মেদিনীপুর সদর ব্লকের পারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিস মাটি খুঁড়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে এনায়েতপুরের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। কিন্তু এরপরেই কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হতে থাকে, এনায়েতপুরে সি পি আই (এম)'র পার্টি অফিস থেকে পুলিস অস্ত্র উদ্ধার করেছে এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে শিলদা ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। এরপরেই সন্ধ্যা ৬টার সময়ে ডি জি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। সাংবাদিক সম্মেলন তিনি সাধারণত করেন না কখনই। রাজ্য পুলিসের সর্বোচ্চ পদে বসার ৯ মাস পরে এই প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করতে বসেন নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। ডিজি সাংবাদিকদের উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বিবরণ দিয়ে বলেন, একটি এ কে ৫৬ রাইফেল, একটি ইনসাস, ৮টি পয়েন্ট ৩১৫ রাইফেল, ২২টি পাইপগান, ১টি পয়েন্ট ৩৭৫ রাইফেল, ১৩৬টি কার্তুজ ইত্যাদি পাওয়া গেছে। একটি মাঠের মধ্যে নতুন খোঁড়া জায়গায় ঢিবির মধ্যে অস্ত্রগুলি রাখা ছিল। ইনসাস রাইফেলটির আর্সেনাল নাম্বার মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেটি শিলদা ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়ার অস্ত্রের নাম্বারের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। 

প্রথমে ডি জি বলেন, ''শিলদা ক্যাম্পের অস্ত্র লুঠ মাওবাদীদের কাজ বলেই আমরা তদন্তে জেনেছি। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের যোগ আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে।''

ডি জি যখন সাংবাদিক বৈঠকে এই সব বলছেন, ঠিক তখনই তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। সাংবাদিক বৈঠক থামিয়ে নম্র গলায় ডি জি-কে বলতে শোনা যায়, ''হ্যাঁ বলুন।... ঠিক আছে, আমি বলে দিয়েছি।... ঠিক আছে, আমি আরেকবার বলে দিচ্ছি ...।'' এরপরেই ডি জি সাংবাদিকদের বলেন, এই অস্ত্র উদ্ধারের ফলে শিলদা ক্যাম্পে হামলার ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় পাওয়া গেলো। সি পি আই (এম) এই ঘটনার সঙ্গে এবং মাওবাদীদের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সি আই ডি তদন্ত করে দেখবে এবং দরকার হলে সি পি আই (এম)'র কেউ যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে। ডি জি আরো জানিয়েছেন, ডি আই জি (সি আই ডি)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দরকার হলে শিলদার ঘটনায় অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করা হবে। 

উল্লেখ্য, অস্ত্র উদ্ধারের পর পুলিস যখন সাংবাদিকদের সামনে সেগুলির ছবি তোলার জন্য মেলে ধরে, তখন তার সঙ্গে নতুন লাল পতাকাও রাখা ছিলো। 

কিন্তু এনায়েতপুরের পার্টি অফিসে পুলিস দু'দিন আগেও তল্লাশি চালিয়েছিল, তখন কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এদিন কলকাতায় ডি জি রহস্যজনক টেলিফোন নির্দেশের পরে সাংবাদিকদের কাছে সি পি আই (এম) সংস্রবের কথা বললেও এদিনই মেদিনীপুরে বসে ডি আই জি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল কিন্তু এই ধরনের কোনো কথাই বলেননি। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে পারুলিয়া থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কথা বললেও জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে মাওবাদী অথবা কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে দেখতে হবে।

তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে অসন্তুষ্ট হয়েই রাজ্য সরকারের কর্তারা ডি জি-কে বিশেষ ব্রিফিংয়ের নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। বিশেষ ব্রিফিং-এর সময় কোন্‌ কথা আবার বলতে হবে, ফোন মারফত তারও নির্দেশ ‌আসে। ডি জি জানিয়েছেন, কেশাশোল এবং রাজারহাট থেকেও পুলিস বে‌আইনী অস্ত্র, বোমা ইত্যাদি উদ্ধার করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে সি পি আই (এম)'র একটি অফিস থেকে পুলিস তালা ভেঙে ৫৮টি জলপাই রঙের পোশাক উদ্ধার করেছে। এই প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিস সুপার ঋষিকেশ মীনা জানিয়েছেন, জলপাই রঙের পোশাক রাখা অপরাধ নয়, তার অপব্যবহার অপরাধ। এক্ষেত্রে পুলিস তদন্ত করে দেখছে।

এদিকে সাংবাদিকরা নিরুপম সেনকে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, বেআইনী অস্ত্র উদ্ধারের বিরোধী আমরা নই। আমরা সরকার চালানোর সময়েও মুখ্যমন্ত্রী নিজে নির্দেশ দিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে বলেছিলেন পুলিসকে। কিন্তু বেআইনী অস্ত্রের নাম করে পার্টি অফিসকে জড়ানোর আমরা প্রতিবাদ করছি। 

সেন একথাও বলেন, নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের পার্টির কর্মী ও নেতাদের ওপরে হামলা চলছে। গতকাল আউসগ্রামের পরে আজকেও পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতার ওপরে হামলা হয়েছে। এই সব আক্রমণ কমার লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মুখে শান্তির কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে তিনি আমাদের শান্তির যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তারও কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। বহু বামপন্থী কর্মী বাড়ি ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সি পি আই (এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বিনয় কোঙারও বলেছেন, পার্টি অফিসে বেআইনী অস্ত্র রাখার কোনো প্রশ্নই নেই। পুলিস এতদিন খুঁজে পেল না, এখন হঠাৎ এসব খুঁজে পাচ্ছে কী করে! এগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা।

বর্ষপূর্তির দিনেও বিঁধছে কেলেঙ্কারির কাঁটা
তদন্ত করতে মরিশাস যাচ্ছেন গোয়েন্দারা

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ২১শে মে—বর্ষপূর্তির দিনও স্বস্তিতে নেই ইউ পি এ-২ সরকার। ঘুরেফিরে চলেই আসছে কর্পোরেট-রাজনীতিবিদ-আমলা যোগসাজশে সরকারী কোষাগারের লোকসান প্রসঙ্গ। আদালতের চাপে স্পেকট্রাম তদন্তে রবিবারই মরিশাসে রওনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সি বি আই এবং এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের একটি দল। এদিনই, সরকারের দু'বছর পূর্ণ হওয়া পালন করতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের জোট শরিকরা। 

টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তদন্তে মরিশাসে রওনা দিল সি বি আই এবং এনফোর্সমেন্ট গোয়েন্দাদের একটি দল। টু-জি স্পেকট্রাম ঘিরে লেনদেনে জড়িত অর্থের তল্লাশি চালাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্পেকট্রাম লেনদেনে যুক্ত অন্তত বারোটি সংস্থার থেকে মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসের একটি বাণিজ্যিক বহুতলের ঠিকানা পেয়েছে গোয়েন্দারা। স্পেকট্রামের বরাত পাওয়া এবং পরে তা বিক্রির সময় মরিশাস থেকে টাকা আসার তথ্য পেয়েছে সি বি আই।

রবিবার, ইউ পি এ-২ সরকারের দু'বছর পূর্ণ করার দিনই কেন্দ্রীয় দুই সংস্থার গোয়েন্দাদের এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারী সংস্থা তদন্ত করলেও বাস্তবে তা সরাসরি নির্দেশিত হচ্ছে দেশের শীর্ষ আদালতের মাধ্যমে। এমনকি, স্পেকট্রাম বরাত কেলেঙ্কারির তদন্তে গঠিত বিশেষ আদালতে সি বি আই-র হয়ে সওয়ালকারী আইনজীবী হিসেবে ইউ ললিতকে নিয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্টই। কেন্দ্রের সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে যা যথেষ্ট অস্বস্তিকর।

দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, স্পেকট্রামের সঙ্গেই কমনওয়েলথ থেকে আদর্শ আবাসনের মতো কেলেঙ্কারি তো আছেই। তার সঙ্গে রয়েছে খাদ্য সুরক্ষা বিল এখনো সংসদে না আনার ব্যর্থতা। আবার একইসঙ্গে তড়িঘড়ি সংস্কারের নামে সরকারী নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হচ্ছে দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে। পেশ হয়েছে ব্যাঙ্ক, বীমা, পেনশন তহবিল বেসরকারীকরণের বিল।

স্পেকট্রাম বরাত বিলি করা হয়েছিল বাজার দামের চেয়ে অনেক কম দামে। নিলামের প্রক্রিয়া গৃহীত হয়নি। কেন্দ্রীয় হিসাবরক্ষক যে চক্রান্তের পাণ্ডা হিসেবে অভিযুক্ত প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এবং ডি এম কে সাংসদ এ রাজাকে তিহার জেলে পাঠিয়েছে আদালত। চক্রান্তে যুক্ত থাকার জন্য বিচারাধীন আরো তিনটি কর্পোরেটের একাধিক কর্তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। রাজার সময়ের দুই শীর্ষ আমলাও জেলে। মাত্র দু'বছরের মধ্যেই কেলেঙ্কারির ঢেউয়ে দেশ ভাসানো সরকারের প্রধান দল কংগ্রেস ঢাল করছে ওই গ্রেপ্তারের ঘটনাকেই। দলের অন্যতম মুখপাত্র অভিষেক সিংভির দাবি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কংগ্রেসই। যার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নজরদারি না করলে এই ব্যবস্থাগ্রহণ হতো না। কেলেঙ্কারির তদন্তে নামার দু'বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সি বি আই। বিরোধীরা স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবিতে সংসদ অচল করার পর এবং আদালতের সমালোচনার মুখে পড়ায় নড়াচড়া শুরু হয়।

কম দামে স্পেকট্রামের বরাত পাওয়া বিভিন্ন সংস্থা, যাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল টেলিকম ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা 'ট্রাই', তারাই বিদেশের বিভিন্ন সংস্থাকে চড়া দামে বরাত বেচেছে। এদিন মরিশাসে দল পাঠানোর আগে এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সেই লেনদেন খতিয়ে দেখতে চান গোয়েন্দারা। কিন্তু, বরাতে জড়িত সংস্থাগুলির লেনদেন মরিশাস মারফত হওয়ায়, নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়বে কেন্দ্র। ভারত ও মরিশাসের মধ্যে দ্বৈত কর ছাড় চুক্তির ফায়দা তোলে বিভিন্ন সংস্থা। যে কারণে বামপন্থীরা গোলমেলে এই চুক্তি বাতিলেরও দাবি তুলেছেন।

এদিন, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে মরিশাসের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, ওই সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ভারতে স্পেকট্রাম বরাতের জন্য টাকা কিভাবে পাঠিয়েছে খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।

কার ফোনে এলো নির্দেশ?

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২২শে মে— সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন রাজ্য পুলিসের ডি জি-র মোবাইলে কার ফোন এলো, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐ ফোনটির পরেই ডি জি-র কথা অনেকটা বদলে যায়। সি পি আই (এম)-কে জড়িয়ে 'নতুন অ্যাঙ্গেল'-এর কথা বলতে থাকেন তিনি। ফোনে এপ্রান্ত থেকে তাঁকে বলতে শুনেছেন সাংবাদিকরা সবাই, 'হ্যাঁ, একবার বলেছি, ঠিক আছে, আবার বলে দিচ্ছি।' তারপরই ডি জি-র কথা বদল। কে তাঁর মোবাইলে ফোন করেছিলেন ? কাকে ব্যাখ্যা দিতে হলো ডি জি-কে? কাকে বলতে হলো তিনি আবার বলছেন? সাধারণত প্রশাসনিক বিধি অনুযায়ী, রাজ্য পুলিসের সর্বোচ্চ পদাধিকারীকে ফোনে কোনো নির্দেশ দিতে পারেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব পদমর্যাদার আধিকারিকরাই। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিট নাগাদ ফোনটি আসতেই ডি জি যেভাবে বাড়তি সম্ভ্রমের সঙ্গে 'হ্যাঁ, বলুন' বলে কোনো কথা 'আবার বলে দেওয়ার' নিশ্চিত আশ্বাস দিলেন, তাতে বোঝাই যায়, তাঁর ওপরে থাকা কারোর ফোনই তখন তাঁর মোবাইলে এসেছিলো। কে তিনি? সাংবাদিকরা অবশ্য জানতে চাননি কার সঙ্গে ফোনে কথা হলো ডি জি-র। কিন্তু দেখলেন সবাই, তারপরই বদলে গেল ডি জি-র কথা।

কোতুলপুরে অস্ত্র উদ্ধারের নামে
তৃণমূলী ষড়যন্ত্র ফাঁস

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া, ২২শে মে — পুকুরের জলে পাওয়া অস্ত্রকে 'সি পি আই (এম) কার্যালয় থেকে পাওয়া অস্ত্র' বলে দেখিয়েছিলেন কোতুলপুর থানার মেজবাবু চন্দ্রশেখর ঘোষ। তাও আবার সাংবাদিকদের ডেকে। তার ছবিও তোলানো হয়। সেই তথ্য ফাঁস হয়ে গেল কোতুলপুর থানার মেজবাবুকে এস ডি পি ও এসে জেরা করার পর! দু'দিন আগে কোতুলপুর থানার চাতরা গ্রামের একটি পুকুরে অস্ত্র আছে বলে তৃণমূলীরা পুলিসকে খবর দেয়। স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য, তার আগের দিন স্থানীয় তৃণমূলীদের ঐ পুকুরের পাড়ে দীর্ঘক্ষণ দেখা গেছে। মানুষ যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারেন তারজন্য আগে থেকেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রাখে তৃণমূলের ঐ বাহিনীটি। শুক্রবার সকালে তৃণমূলের দলটি উৎসাহ নিয়ে এলাকায় প্রচার শুরু করে পুকুরে অস্ত্র রাখা আছে। নিমেষের মধ্যে কোতুলপুরের বিডিও ও থানার অফিসার চন্দ্রশেখর ঘোষ ঘটনাস্থলে হাজির হন। তৃণমূলের লোকজন নির্দিষ্ট জায়গাটিও দেখিয়ে দেয়, কোথায় রয়েছে অস্ত্র। আতঙ্কে সাধারণ মানুষজন ঘটনাস্থলে হাজির হননি। এরপর কয়েকটি অস্ত্র তুলে থানার অফিসার চন্দ্রশেখর ঘোষের নেতৃত্বে পুলিসবাহিনী সেই অস্ত্র স্থানীয় সি পি আই (এম) কার্যালয়ে নিয়ে যায়। আলোকচিত্রীদের ডেকে সেই অস্ত্রের ছবি তোলানো হয় সি পি আই (এম) কার্যালয়ের সামনে থেকে। ঘোষণা করা হয় পার্টি অফিস থেকেই এই অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে গ্রামের কয়েকজন মানুষ উপায়ান্তর না দেখে টেলিফোনে খবর দেন এস ডি পি ও'কে। পরিকল্পনামাফিক তৃণমূলবাহিনী এবং পুলিস পরিকল্পনা করে ঘটনাটি যে সাজিয়েছে তাও গ্রামবাসীরা জানান এস ডি পি ও'কে। কিছুক্ষণ পরেই এস ডি পি ও দিব্যজ্যোতি দাস ঘটনাস্থলে হাজির হলে কোতুলপুর থানার ঐ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, অস্ত্র মিলেছে পুকুর থেকে। তাহলে কেন সেই অস্ত্র সি পি আই (এম) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলো? এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি থানার চন্দ্রশেখর ঘোষ এবং কোতুলপুরের বিডিও।

এদিকে রবিবার বিজয় মিছিলের নাম করে সকালে ওন্দার রতনপুর পার্টি অফিস আক্রমণ করে তৃণমূলীরা। সকালে সি পি আই (এম) কার্যালয় বন্ধ ছিল। ৯টা নাগাদ মিছিল করে তৃণমূলীরা পার্টি অফিসে চড়াও হয়। শহীদবেদী ভেঙ্গে পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়। পার্টি কার্যালয়ের বারান্দায় থাকা চেয়ার, চৌকি ভাঙ্গা হয়। এই হামলা ঠেকাতে গেলে এক পুলিসকর্মী আহত হন। এদিকে পাত্রসায়রেও হামলা অব্যাহত আছে। এদিন সকালে পাত্রসায়রের বামিরা গ্রামে সি পি আই (এম) নেতা নিখিল সোম ও কার্তিক ব্যানার্জির ঘরে হানা দিয়ে সবকিছু তছনছ করে দেয় তৃণমূলবাহিনী।

পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলী হামলায়
গুরুতর জখম জেলা কমিটির সদস্য

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর, ২২শে মে — তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের নৃশংস আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন সি পি আই (এ‌ম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য বাদল রানা। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই আক্রমণে জখম হয়েছেন ডি ওয়াই এফ আই-র জেলা কমিটির সদস্য শেখ অসিমুদ্দিন। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরিতে এই ঘটনা ঘ‍‌টেছে। সি পি আই (এম) নেতা এবং সমর্থকদের ওপর ওই লাগাতার হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সি পি আই (এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক দীপক সরকার। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে শান্তির কথা বললেও তৃণমূল সমর্থক এবং কর্মীরা মারাত্মক আক্রমণ চালাচ্ছে। সি পি আই (এম) কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। বাদল রানাকে আক্রমণ করা হামলার একটি অংশমাত্র। গত সাতদিন ধরে গোটা জেলায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল কং‍‌গ্রেস। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এদিনই তৃণমূলী হামলা হয়েছে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সি পি আই (এম)-র নিরঞ্জন সিহির বাড়িতে। সি পি আই (এম) আক্রান্ত হয়েছে এদিন পটাশপুরেও।

সাঁকরাইলের ঘটনার বিষয়ে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার ২০শে মে সাঁকরাইল ব্লকে কুলটিকরিতে বিজয় মিছিল করে তৃণমূল। গোলমাল হবার আশঙ্কায় প্রশাসনের অনুরোধে এই দিন বন্ধ রাখা হয় সি পি আই (এম) কুলটিকরি লোকাল কমিটির কার্যালয়। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ পার্টি কার্যালয় খোলেন বাদল রানা। সাথে ‍‌ছিলেন শেখ অসিমুদ্দিন সহ ২জন পার্টিকর্মী। আগে থেকেই গোপনে প্রস্তুতি নিয়েছিল তৃণমূলীরা। অফিস খোলার পরেই পিছনের পাঁচিল টপকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রায় ৪০/৫০ জন তৃণমূল সমর্থক। বাদল রানারও ওপর হামলা হয়। তাঁকে এবং অসিমুদ্দিনকে টেনে হিঁচড়ে ওরা নিয়ে যায় রাস্তায়। বাদল রানার মাথায় ছাদ ঢালাই-এর পাটা দিয়ে আঘাত করে। কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে ২জনকে বেঁধে রাখে একটি টেলি‍‌ফোনের খুঁটিতে। এই তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট।

অন্যদিকে, ফাঁকা খোলা অফিসে একটি রিভলভার সহ কয়েকটি কার্তুজ রেখে দেয় তৃণমূলের সমর্থকরা। তারপর পার্টি অ‍‌ফিসে অস্ত্র আছে বলে ঘিরে রাখে। দুষ্কৃতীদের অন্য একটি দল ভাঙচুর চালায় পার্টি সদস্য মৃগেন জানার বাড়িতে। মৃগেনকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে টেনে বের করে আনে। মৃগেন জানার বাড়িতে ভাড়া থাকেন কুলটিকরি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। ছুটির কারণে ভাড়া ঘরে তালাচাবি দিয়ে তাঁরা চলে গেছেন বাড়ি। তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা শিক্ষিকাদের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়। তারা পার্টি সদস্য ধর্মেন্দ্র জানার বাড়িতেও চালায় ভাঙচুর। আগুন লাগিয়ে দেয় মোটর সাই‍‌কেলে।

কুলটিকরি থেকে থানা মাত্র ৫ কিমি দূরে। পুলিসকে ঢুকতে দেয়নি দুষ্কৃতীরা। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে সি আর পি এফের সাহায্যে নিয়ে উদ্ধার করা হয় আক্রান্ত বাদল রানাকে। কুলটিকরি পার্টি অফিসে তল্লা‍‌‍‌শি চালিয়ে তৃণমূল দুষ্কৃতী‍দেরই রাখা রিভলভার এবং ৪টি কার্তুজ পেয়েছে পুলিস। হামলায় নেতৃত্ব দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা আশুতোষ বারিক, খগেন হাটুই, পীযূষ প্রামাণিক, বিশ্বজিৎ প্রধান, সত্যজিৎ ঘোষ, কেশিয়াড়ির সমীর সাঁতরাসহ কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে মারধর ও জরিমানা আদায়। হেনস্তা করা হয়েছে এ বি টি এ-র সভ্য জোনাল সম্পাদক তুলসী মাইতিকে। দুষ্কৃতীরা বিষ্ণুপুরে পার্টির শাখা সম্পাদক মদন দাস এবং তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেছে। তারা শালবনীর মণ্ডল-কুপিতে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে পার্টিকর্মী অনুপ ঘোষকে। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিস প্রশাসনের উদ্যো‍‌গে সর্বদলীয় সভা হয়েছে।

নিরঞ্জন সিহির বাড়িতে হামলা : উন্মত্ত তৃণমূলীরা এবার আক্রমণ চালালো পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা নিরঞ্জন সিহির বাড়িতে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রাতুলিয়া বাজার থেকে প্রায় ৪০-৪৫ জন মদমত্ত তৃণমূলী গিয়ে আক্রমণ করে তাঁর বাড়ি। বোমা মেরে বাড়িটিকেই উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এঘটনায় পাঁশকুড়া থানার এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বহু দেরিতে পুলিস পৌঁছেছে।

ঘটনার বিবরণে নিরঞ্জন সিহি জানান, তৃণমূলীরা বহুদিন থেকেই আক্রমণের ছক কষেছিল। এদিন যে আক্রমণ হতে পারে, তা আঁচ করে থানায় জানানো হয়েছিল। কিন্তু মিছিলের সময় কোনো পুলিস ছিল না। মিছিলে আগত তৃণমূলীরা প্রথমেই শাবল দিয়ে বন্ধ দরজা ভেঙে তাঁর বাড়ির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ দেয়। সবুজ আবির বাড়ির মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। এরপর দরজা ভাঙতে না পেরে বোমা ছোঁড়ে। তখন নিরঞ্জন সিহির দুই নিরাপত্তারক্ষী রুখে দাঁড়ালে মিছিলে আগতরা ভয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা নিরঞ্জন সিহি। গত জেলা পরিষদে তিনি ছিলেন সভাধিপতি। এছাড়া বর্তমানে সি পি আই (এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন পার্টির জেলা সম্পাদক কানু সাহু। নিরঞ্জন সিহি বলেন, আগাম জানানো সত্ত্বেও পুলিস কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

পটাশপুরে হামলা: তৃণমূলের দাবি অনুযায়ী সি পি আই (এম)-এর জোনাল অফিসে তল্লাসি চালিয়েও অস্ত্র না মেলায় মারমুখী তৃণমূল বাহিনীর ওপর লাঠি চালাল পুলিস। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে পটাশপুরের সিতিদায়। পুলিস জানিয়েছে, অস্ত্র তো মেলেইনি উলটে কিছু উত্তেজিত মানুষ সি পি আই (এম)-এর দপ্তরে ভাঙচুর চালাবার চেষ্টা করে। তখন বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করতে হয়।

শুধু এদিন নয়, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার আগে থেকেই গোটা পটাশপুর জুড়েই সি পি আই (এম) কর্মী-সমর্থকদের উপর কুৎসিত হামলা, মোটা টাকা জরিমানা, বাড়িঘর লুঠপাট ও পার্টি অফিস দখল করে ফের পরিকল্পিত সন্ত্রাসের আবহ তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল। সি পি আই (এম) সূত্রের খবর, শনিবার রাতে বড়হাট এলাকার পার্টিকর্মী খোকন মাইতিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে তৃণমূল। গোপালপুরের দুর্গাপদ মাল, মানিক জানাও তৃণমূলী আক্রমণে শয্যাশায়ী। হাত ভেঙে দিয়েছে পাঁচজনের।

আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। মারধর, ঘরবাড়ি লুঠপাট ও জরিমানার ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য। ১৫০ জন পার্টিকর্মী ও সমর্থক ঘরছাড়া। টনিয়াবিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৫৭ বছরের অচিন্ত্য পাত্র তৃণমূলী ফতোয়া মতো ৫ লক্ষ টাকা না দেওয়ায় টানা পাঁচদিন এলাকা ছাড়া। তাঁর ছেলে বিপ্লব পাত্র নেকুড়শুনে হাই স্কুলের ক্লার্ক। তাঁরও একই দুরবস্থা। এছাড়াও সুবল প্রধান, গোপাল দলুইসহ প্রায় চারজন শিক্ষাকর্মীও স্কুলে যেতে পারছেন না। জরিমানার তিন লক্ষ টাকা না দিলে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফতোয়া তৃণমূলের। তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা ৮টি বাড়ি ভেঙেছে। ২০টি দোকানে তালা দিয়েছে। ব্রজলালপুর, নৈপুর, মথুরাগ্রাম পঞ্চায়েতগুলির গ্রামে গ্রামেও প্রতিদিন তৃণমূলী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ব্রজলালপুরে ৫০টি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বত্র আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নগর ভ্রমণের রাতে বেলেঘাটায়
পার্টির দপ্তর গুঁড়িয়ে দিলো জল্লাদবাহিনী

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২২শে মে— মন্ত্রিসভা গড়ার পরের দিনই কলকাতা মহানগর পরিক্রমণে বেরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আর সেই শহর পরিদর্শনের কিছু পরে শনিবার রাতেই তৃণমূলীরা এই কলকাতার বেলেঘাটাতেই গুঁড়িয়ে দিলো সি পি আই (এম)-র একটি দপ্তর। কলকাতা কর্পোরেশনের ৩৪নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গগন সরকার রোডে সি পি আই (এম)-র বেলেঘাটা রাসমণি বাজার আঞ্চলিক কমিটির ১৯ এবং ১৯/এ শাখার কার্যালয়টি শাবল, হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। জেলায় জেলায় এখনও ঘরছাড়া হাজার হাজার বামপন্থী কর্মী ও সমর্থক। ভোটের ফল ঘোষণার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে ৭জন বামপন্থী কর্মী খুন হয়েছেন। আর তার মধ্যেই শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত এই খোদ কলকাতা মহানগরেও নয়া তৃণমূলী 'গণতন্ত্র'-র হামলায় গুরুতর আহত হলেন ৫জন সি পি আই (এম) কর্মী। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল পার্টি দপ্তর। সেই সঙ্গে লালপতাকা ছাড়ার জন্য হুমকি চলছে কলকাতার অলিগলিতে।

৪/৬ গগন সরকার রোডে বস্তির ভেতরে বহুদিন ধরেই রয়েছে সি পি আই (এম)-র কার্যালয়। শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এখানেই সশস্ত্র তৃণমূলীরা হামলা চালায়। সঙ্গে বহিরাগত দুষ্কৃতীরাও ছিল। বোমা এবং বন্দুকের সঙ্গে শাবল ও হাতুড়ি নিয়ে আসা দেখেই বোঝা যায়, পার্টি দপ্তর ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েই তৃণমূলীরা এসেছিল। শাবল, হাতুড়ি দিয়ে পার্টি অফিসের ইটের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় শহীদ বেদী। পার্টি অফিসে রাখা লালঝান্ডা, পার্টির প্রচার পুস্তিকা, জ্যোতি বসু, লেনিন ও স্তালিনের ছবি টেনে ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পাখা এবং পার্টি অফিসের আসবাবপত্রগুলিও ভাঙচুর করা হয়। অফিসে রাখা পার্টির সংগ্রাম তহবিলের টাকা লুট করে তৃণমূলী পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। পার্টি দপ্তরের পাশের পুকুরে সমস্ত কাগজপত্র এবং পার্টির পতাকা ফেলে দেওয়া হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর শহর ভ্রমণের রাতে এন্টালি থানা এলাকাতেও একইরকমভাবে আক্রান্ত হন পার্টিকর্মীরা। সেখানে পার্টিকর্মীদের বাড়ি থেকে টেনে বের করে লাঠি, উইকেট, লোহার রড দিয়ে বেপরোয়া মারধর চলে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এন্টালি থানা এলাকায় ছাতুবাবু লেন সংলগ্ন এলাকায় বাইরের দুষ্কৃতীসহ প্রায় ৩০জনের একটি সশস্ত্র তৃণমূলী দল নৃশংস হামলা চালায় পার্টিকর্মীদের ওপর। ছাতুবাবু লেনে সেই সময়ে সি পি আই (এম) এন্টালি পূর্ব আঞ্চলিক কমিটির পূর্ব-৩ শাখা অফিসের একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন পার্টিকর্মী মৃত্যুঞ্জয় সাহা, মনোজ রাম, জয়দেব রাউত ও আরও কয়েকজন। আচমকা এই তৃণমূলীরা লোহার রড, লাঠি, উইকেট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের ওপরে। মৃত্যুঞ্জয় সাহা, মনোজ রামের মুখে চোখে, মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। আহত হয়েছেন জয়দেব রাউত ও অন্যান্যরা। এরপরই তৃণমূলীরা একটু দূরে পার্টিকর্মী দেবশঙ্কর রায়কে বাড়ি থেকে ডেকে এনে মারধর করে নৃশংসভাবে। পার্টিকর্মী গোপাল দে-কেও তৃণমূলীরা বাড়ি থেকে বের করে এনে মারধর করে। এরপর ছাতুবাবু লেনে পার্টি অফিসে গিয়ে প্রবীণ পার্টিকর্মীদের উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া শুরু করে তৃণমূলীরা।

প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে তৃণমূলীরা চলে যায়। আহত পার্টিকর্মীদের নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মনোজ রামের মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। আক্রমণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পার্টির নেতৃবৃন্দ। এই ঘটনায় রবিবার সকাল থেকেই গোটা এলাকাতেই উত্তেজনা ছড়ায়। এই ন্যক্কারজনক তৃণমূলী হামলার প্রতিবাদে এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই পার্টি নেতৃবৃন্দ মিছিল সংগঠিত করে এন্টালি থানায় ডেপুটেশন দেন। হামলায় যুক্ত দোষীদের শাস্তি ও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনেও এক সামান্য চা-বিক্রেতার ওপর চলছে তৃণমূলীদের হুমকি, আক্রমণ। ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই হকার নিমাই হালদারের চায়ের দোকান তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূলীরা। বামপন্থী হকার আন্দোলনের সংগঠক এই নিমাই হালদার। তাই আক্রোশ মেটাতেই তাঁর চা-দোকান তুলে দেওয়ার হুমকি। রবিবার সকালে তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন পার্টিনেতা দীপা রায় ও অন্যরা।

অন্যদিকে, পূর্ব কলকাতার ট্যাংরায় বাজারের হকার্স ইউনিয়নের দখলদারি নিয়ে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে সমানে লড়াই। শনিবারই তৃণমূলের এক গোষ্ঠী এসে ট্যাংরা হাউজিং বাজারের শ্রমিক-কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে সই আদায় করে ইউনিয়ন দখল করার চেষ্টা চালায়। পালটা গোষ্ঠী রবিবার একই কায়দায় ভয় দেখিয়ে সই আদায়ে নামে। এই ইউনিয়নের দখলদারি নিয়েই এখন ট্যাংরায় চরম উত্তেজনা।

তৃণমূলী দপ্তরের অদূরে ব্যাগ থেকে বিস্ফোরণ
হুগলীতে এক কিশোরের মৃত্যু, জখম আরো ২

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর, ২২শে মে— রাস্তার ধারে ঝোপের পাশে রাখা ব্যাগ ঘিরে নেহাতই কৌতূহল মেটাতে গিয়ে প্রাণ গেল এক কিশোরের। গুরুতর জখম অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আরও দুই কিশোর। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হুগলীর মগরা থানা এলাকার ত্রিবেণী টিস্যু কারখানার জেটি গেটের কাছে। 

ব্যাগের মধ্যে রাখা ছিল শক্তিশালী বোমা। সেই ব্যাগভর্তি বোমা কিশোররা নাড়াচাড়া করতেই ঘটে যায় বিস্ফোরণ। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, বোমা সহ ব্যাগটি রাখা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দপ্তর থেকে মাত্র ৫০ফুট দূরে। আর বোমা বিস্ফোরণের পর এলাকার মানুষ কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অজানা আতঙ্কে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর সাধারণভাবে মানুষের ক্ষোভের যে প্রকাশ দেখা যায়, এদিন তাও ছিল না গোটা এলাকায়। 

মৃত কিশোরের নাম অমিত রাজভর (১৬)। গুরুতর জখম দুই কিশোরের নাম রাহুল প্রসাদ (১৩) ও এম কৃষ্ণ (১৪)। এদিন বিকট আওয়াজ প্রথমে টের পান স্থানীয় মানুষজন। আওয়াজ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীদের চোখে পড়ে, ঝলসে যাওয়া তিন কিশোরের দেহ তিনদিকে ছিটকে পড়ে আছে। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে আহত তিন কিশোরকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অমিত রাজভরের মৃত্যু হয়। জখম দুই কিশোরের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও জানা গেছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই তৃণমূল কংগ্রেস মগরা থানা এলাকার চন্দ্রহাটি ২নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পূর্ত দপ্তরের জায়গা দখল করে দলীয় অফিস নির্মাণ করে। তারপর থেকেই এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতীদের আড্ডাস্থল হয়ে দাঁড়ায় ঐ তৃণমূল দপ্তর। মগরা থানায় বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত রাজকুমার দাস, বাবু সরকার, গৌতম বিশ্বাসদের প্রতিদিনই দেখা মিলতো এই দপ্তরেই। কিন্তু এখন ভোটে জেতা তৃণমূলীদের দাপটে পরিস্থিতি এমনই যে, ভয়ে কোনো মানুষই মুখ খোলার অবস্থায় নেই। এমনকী ইমামবাড়া হাসপাতালেও মৃত অমিত রাজভরের পরিবারের লোকজনকে নিজেদের ঘেরাটোপে রেখে দিয়েছে তৃণমূলীরা।

মৃত অমিত রাজভর ও আহত দুই কিশোরের বাড়ি এলাকার শ্রমিক বস্তিতেই। 

খণ্ডঘোষের গ্রামে মহিলাদের সম্ভ্রম
কেড়ে বিজয় উল্লাসে মাতলো তৃণমূল

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান, ২২শে মে— পরিবর্তনের জমানায় এমন নৃশংসতা দেখে জয়দেব বাগদী শিউরে উঠছেন। বাহাত্তর সাল দেখেছেন, ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকেও দেখেছেন, কিন্তু গ্রামে বিজয় উল্লাসের নামে এমন পৈশাচিক কাণ্ডকারখানা কখনও দেখেননি। ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ বলেছেন, ''কংগ্রেস শাসনেও মারধর খেয়েছি, কিন্তু এমন আক্রমণ দেখিনি। মা-বোন জ্ঞান নেই, মেয়েদের টেনে শরীর থেকে কাপড় সরিয়ে সবুজ আবির মাখিয়ে যারা ফুর্তি করলো, তারা যে কী সুখ দেবে, আমি ভেবে পাচ্ছি না।''

রবিবার ছিল খণ্ডঘোষ থানার বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের আমরাল গ্রামে তৃণমূলের বিজয় মিছিল। ভারতী বাগদী বলেছেন, এর আগে গাঁয়ে অনেকবার বিজয় মিছিল হয়েছে, কিন্তু লাল আবির নিয়ে খেলে কখনও অন্যকে কষ্ট দেয়নি কেউ। তবে এদিনের বিজয় মিছিল দেখে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত। চোখে-মুখে তার ছাপ স্পষ্ট। সবুজ আবির ছুঁড়তে ছুঁড়তে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে সি পি আই (এম) কর্মী অর্দ্ধেন্দু শামের বাড়িতে। সেই মুহূর্তে অর্দ্ধেন্দু শামের স্ত্রী হীরাদেবী রান্নাঘরে ভাত রান্না করছিলেন। দুষ্কৃতীরা টাঙ্গি, কুড়ুল, শাবল, তরোয়াল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাড়ির উপর। হামলাকারীরা ঘরের আসবাবপত্র ছাড়াও ইলেকট্রিকের মিটার, পানীয় জলের টিউবওয়েল, ধানের মড়াই, এমনকি ভাতের হাঁড়ি পর্যন্ত ভেঙে তছনছ করে দেয়। লুট করে নিয়ে যায় পাঁচ ভরি সোনা, ধান বিক্রির নগদ ৩২ হাজার টাকা। রান্নাকরা ভাতের মধ্যে দুষ্কৃতীদের মুত্রত্যাগ করতেও দেখেছেন প্রতিবেশিরা। হঠাৎ এই বা‍ড়ির চৌকাঠ পেরলে মনে হবে একটা ভয়ঙ্কর 'আইলা' ঝড়ে বোধহয় ভেঙে দুমড়ে গেছে এ বাড়ির বর্তমান স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ সব। চলে যাওয়ার সময় অর্দ্ধেন্দু শামকে না পেয়ে তাঁর রুগ্ন স্ত্রী হীরাদেবীকে লাঠির ঘা দিতে ভোলেনি দুষ্কৃতীরা। রান্নাকরা ভাত নষ্ট করে রান্নাঘরে আগুনও ধরিয়ে দিয়ে গেছে।

এ বাড়ির মেধাবী ছাত্র সৌরভ শাম এম এ পড়ছে, তাঁকে মারধর করে তাঁর সমস্ত মার্কশিট, অ্যাডমিট কার্ড লুট করে নিয়ে গেছে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা।

গরিবপাড়ায় মেয়েদের শরীর থেকে শাড়ি সরিয়ে আবির মাখিয়ে যে উল্লাস করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা, তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন গরিব মানুষ। এখানকার প্রায় ১৫ জন মহিলাকেও মারধর করেছে তৃণমূলের জল্লাদবাহিনী। 

বাঁকুড়ার ইন্দাসের কাছে বাঁকুড়া-বর্ধমান সীমান্ত বরাবর আমরাল গ্রাম। সেখানে এদিন খেতমজুর তথা পার্টিকর্মী মোহন রায়ের বাড়িতেও চড়াও হয় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তাঁর ধানের মড়াই ভেঙে ধান লুট করে, তাঁর ছেলে এবং স্ত্রীকে তারা মারধর করেছে। এছাড়া পার্টিকর্মী অষ্টম রায়কে মারধর করে তাঁর ঘরের দরজা ভেঙে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে তৃণমূলের তাণ্ডবকারীরা। তাঁর বাক্স ভেঙে পাঁচ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। দুষ্কৃতীরা পার্টির লোকাল কমিটির সদস্য মুরারী রায়ের বাড়ি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। লুট করে নিয়ে গেছে টাকা ও সোনার গয়না।

এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ একদিকে চলেছে তৃণমূলের বিজয় মিছিল, অন্যদিকে সশস্ত্রবাহিনীর একটি দল চড়াও হয় সি পি আই (এম) কর্মীদের বাড়িতে। তারা বাড়ি বাড়ি ঢুকে গরিবপাড়ার মহিলা ও পুরুষদের হুমকি দিয়েছে, গ্রাম না ছাড়লে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে র‌্যাফের বিশাল বাহিনী আমরাল গ্রামে যায়। কিন্তু এই ঘটনায় তৃণমূলের একজন দুষ্কৃতীকেও পুলিস গ্রেপ্তার করেনি। তৃণমূলের নেতা ও একাধিক অপরাধের নায়ক রবি দত্ত, চন্দ্রচূড় রুদ্র, শৌভিক রুদ্র এবং গোবিন্দ দত্তের নেতৃত্বে এই হামলা সংগঠিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই গ্রাম একসময় জোতদারদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গরিব মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার পান। সেই অধিকার কেড়ে নিতেই এই ভয়ঙ্কর আক্রমণ হয়েছে। অলকা বাগদী বললেন, ওরা মানুষ নয়, নরঘাতক। গরিব বাড়ির মেয়েদের ওরা যে সম্মান দিতে চায় না, তার নমুনা দেখিয়ে দিলো পালাবদলের পরপরই।

কাদের কেমন সৌজন্য,
কারা কাকে শেখায়

অনীক চক্রবর্তী

দলের সভাপতি সীতারাম কেশরীকে তিনি যে সৌজন্য বা শ্রদ্ধার বালাই না রেখে এমনকি 'বুড়ো ভাম' বলেছিলেন, মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে এই তথ্যটা তাদের খবরে জানিয়েছিলো আনন্দবাজার পত্রিকাই।

১৯৯৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস। মমতা ব্যানার্জি তখন কংগ্রেসেই। দল ছাড়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন পুরোদমে। শুধু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব নয়, কংগ্রেস দলটির হাইকমান্ড নামে বস্তুটির সঙ্গেও তখন মমতা ব্যানার্জির আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। তিনি দল ছাড়বেন, নাকি কংগ্রেসই তাঁকে বহিষ্কার করবে, তা নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধে নানা ঘটনায় মমতা ব্যানার্জি তখন রণংদেহী মূর্তিতে অবতীর্ণ। যা খুশি তা-ই বলছেন তিনি তখন কংগ্রেসের শীর্ষনেতাদের। তারই একটি উদাহরণ হলো তখন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি সীতারাম কেশরীকে 'বুড়ো ভাম' বলা! মমতার সেই 'সৌজন্য' আমরা জেনেছিলাম আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে! 

মমতা ব্যনার্জির সৌজন্য আসলে কেমন, তা সেই সময় তুলে ধরেছিলেন সৌগত রায়ও। যিনি এখন তৃণমূলের হয়ে সংসদে গিয়ে কেন্দ্রে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছেন। সেই সময়, ১৯৯৮ সালে মমতা ব্যানার্জি যখন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল দল গড়ে 'বি জে পি অচ্ছুৎ নয়' উচ্চারণ করে বি জে পি-র জোটের হয়ে লোকসভার ভোটে অবতীর্ণ, সৌগত রায় সেই ভোটে দক্ষিণ কলকাতায় মমতা ব্যানার্জিরই বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী ছিলেন। ভোটে একটি লিফলেট দিয়েছিলেন তিনি। তাতে তিনিও মমতা ব্যানার্জির সৌজন্যবোধকে বেআব্রু করে দিয়ে লিখেছিলেন, ''...প্রকৃতপক্ষে নিজেকে ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সম্মান দেখানোর অভ্যাস বোধহয় মমতা আয়ত্ত করতে পারেননি।... নরসিমা রাও থেকে শুরু করে সীতারাম কেশরী কোনও কংগ্রেস সভাপতিই তার বাছা বাছা বিশেষণ থেকে রক্ষা পাননি। তাই ভালোই হয়েছে তিনি নিজের পার্টি তৈরি করেছেন, যেখানে তিনিই প্রথম ও শেষ কথা। যদিও এটা ফ্যাসিস্ত মনের পরিচয়।''

সৌগত রায় যখন মমতা ব্যানার্জির সৌজন্যবোধের অভাবকে তুলে ধরে লিফলেটে এভাবে স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন, সেই সময়েই মমতা ব্যানার্জি সোনিয়া গান্ধীকেও তাঁর অসৌজন্যের শিকার থেকে বাদ রাখেননি। ১৯৯৮ সালেই ১৩ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান পত্রিকা তাদের খবরে পশ্চিমবঙ্গে সেই সময়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে হেলিকপ্টারে চড়ে বেড়ানো সোনিয়া গান্ধী সম্পর্কে মমতা ব্যানার্জির তীব্র কটাক্ষকে তুলে ধরে লিখেছিল, ''বাইরে থেকে ভোটপাখি হেলিকপ্টারে উড়ে এসে কংগ্রেসকে জেতাতে পারবে না।'' পরের বছর ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটেও মমতা ব্যানার্জি তাঁর জোটসঙ্গী বি জে পি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে প্রশংসা করতে গিয়ে তৃণমূল দলের ইশ্‌তেহারে নাম না করে সভা সমাবেশে লিখিত ভাষণ পাঠ করতে অভ্যস্ত সোনিয়া গান্ধীকে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, ''অটলবিহারী বাজপেয়ী এখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের মধ্যে যোগ্যতম। লিখিত ভাষণ পাঠ নয়, স্বতস্ফূর্ত দৃঢ়তায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।'' শুধু কোনও ব্যক্তি বিশেষ নয়, অপছন্দের রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকেও মমতা ব্যানার্জি সৌজন্যের কোনও তোয়াক্কা না রেখে কীভাবে আক্রমণ করেন, তার উদাহরণ ছিলো কংগ্রেসকে 'সি পি আই (এম)-র বি টিম' বলে গালমন্দ করা। আর মমতার এমন মন্তব্য শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরী সাংবাদিকদের মমতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ''এটা রাজনৈতিক সভ্যতার বাইরে। কোনও রাজনৈতিক মানুষ একথা বলতে পারেন না।'' গনিখানের এই মন্তব্যটি ২০০০ সালের ১৯শে জুন যে পত্রিকা ছাপিয়েছিলো, তার নাম আনন্দবাজার পত্রিকা, যারা আজ মমতা ব্যানার্জি যে কতখানি সৌজন্যপ্রেমী, তা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

অনেকে বলতে পারেন, কবে মমতা কাকে কী বলেছিলেন, তা অসৌজন্যের উদাহরণ হতে পারে, কিন্তু এখন সেইসব পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটা হচ্ছে কেন? এই জন্যই ঘাঁটা হচ্ছে, কেন না, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে সৌজন্যের আধার, তা বোঝাতে সেই আনন্দবাজার পত্রিকা ভিত্তিহীন ও হাস্যকর তথ্য দিয়ে এমনকি সি পি আই (এম) তথা বামপন্থীদের সৌজন্যবিরোধী বলে চিহ্নিত করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। আপত্তির কারণ আমাদের এখানেই।

প্রশ্ন হলো, কেন আনন্দবাজার বা বিভিন্ন মমতাময়ী মিডিয়া ''সততা'-র প্রতীককে এখন 'সৌজন্যের প্রতীক' হিসাবে গড়ে তোলার কাজে লিপ্ত হয়েছে? একটা কারণ হলো এই, ওরাও জানে মমতা ব্যানার্জির সৌজন্য বোঝানো খুব কঠিন। ওদের নিজেদেরই সেই অভিজ্ঞতা এতো তিক্ত যে, আনন্দবাজার পত্রিকা পর্যন্ত ২০০১ সালের ১৬ই মে খুবই বিরক্ত হয়ে তাদের সম্পাদকীয়তে 'গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নহে' শিরোনামে লিখতে বাধ্য হয়েছিলো, ''...তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী সর্বদা সমাজে প্রচলিত আচরণবিধি মানিয়া চলেন, এমন অপবাদ তাঁহার সম্বন্ধে কেহ দিতে পারিবে না। তাঁহার রাজনীতির ভাব ও ভাষা বরাবরই স্বকীয়।'' সেবার কী করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, যার জন্য আনন্দবাজার মমতাকে এইভাবে বিঁধেছিলো?

মমতা সেবার করেছিলেন কী, ২০০১ সালের বিধানসভার ভোটে হেরে যাওয়ার পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে 'পারচেজড' বলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছিলেন। মমতার সেই 'সৌজন্য' দেখেই আনন্দবাজার ক্ষুব্ধ হয়েছিলো। কেন না মমতা ব্যানার্জির ভাবমূর্তি রক্ষার দায়-দায়িত্ব নিতে হয় আনন্দবাজারকে। কিন্তু এমন কাণ্ড করেন মমতা, তখন দায়-দায়িত্ব যাদের,তাদেরও হাতের বাইরে চলে যায়। ক্ষুব্ধ আনন্দবাজার সেই ২০০১ সালেই মে মাসের ২৬ তারিখে মমতা ব্যানার্জিকে শালীনতা ও শোভনতার সীমা ছাড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করেও একটা খবর লি‍‌খেছিলো। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এম এস গিল, যাকে মমতা 'পারচেজড' বলেছিলেন, তিনি ২৪শে মে '০১ তারিখে মমতাকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠি সংক্রান্ত খবরটি আনন্দবাজার ২৬শে মে '০১ তারিখে লিখেছিলো এইভাবে, ''মমতা ও তার সতীর্থদের কাছ থেকে যে 'সহযোগিতা ও সৌজন্য' তিনি 'বরাবর পেয়ে এসেছেন', অবসরের পূর্বে একটি ছোট চিঠিতে তার জন্য তৃণমূল নেত্রীকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানালেন গিল।... তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, মমতা যাই বলে থাকুন, তার জন্য তিনি নিজে কখনওই শালীনতা ও শোভনতার সীমা ছাড়াবেন না।''

এই হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির সৌজন্যবোধ। কংগ্রেসে যখন ছিলেন, তখন পুলিসের গালে কালি মাখানো থেকে শুরু করে আয়কর অফিসারকে চড় মারা কিংবা লোকসভায় অধ্যক্ষের দিকে গায়ের শাল ছুঁড়ে মারা, এমন স্টাইলের তার ‍‌নিজস্ব সৌজন্য তৃণমূল নেত্রী হিসাবেও চা‍‌লিয়েছেন অনায়াসে। আর বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে এরাজ্যে বিরোধী দলের নেত্রী হিসাবে কিংবা রেলমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সৌজন্যের পরিচয়টা কেমন? সেটা জানানোর আগে তুলনা টানতে শনিবার ২২শে মে আনন্দবাজার পত্রিকারই একটি খবরের অংশ উদ্ধৃত করা যেতে পারে। যেখানে লেখা হয়েছে, ''বিধানসভার বিদায়ী স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এদিন বিভিন্ন দলের প্রথম সারির নেতাদের ডেকে আলোচনায় বসেছিলেন। সি পি এমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ওই বৈঠকে গিয়েছিলেন। বৈঠকে সূর্যবাবুর কাছে পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পরিষদীয় দলের সহকারী নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরজি জানান, গঠনমূলক কোনও প্রস্তাব থাকলে তাঁরা যেন অবশ্যই সরকার পক্ষকে জানান।... এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিমান বসু এদিন বলেন, আমাদের অবস্থান তো তা-ই। রাজ্যের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, শ্রমজীবী মানুষ এবং অর্জিত অধিকারের স্বার্থে এই সরকারের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করবো। এটার সঙ্গে এটাও বলেছি, জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে আমরা বিরোধিতা করবো।'' খবরের এই অংশটা তুলে ধরলাম কারণ, প্রশ্ন হলো, সরকার পক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বিরোধী দলের কাছে যে প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে সবাই সেই কথা বারংবার শু‍‌নিয়েছেন বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনার ডাক, সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক আন্তরিকভাবেই করেছে বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু পার্থ চ্যাটার্জিরা তখন বিরোধী দল হিসাবে মমতা ব্যানার্জিরই নির্দেশে কোনও ডাকে সাড়া দেননি। সব কিছুই বয়কট। আজকে বিরোধী দলের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু যা বলেছেন, বিগত সময়ে বিরোধী দল হিসাবে তৃণমূল সেই ভূমিকা নেয়নি। সব কাজ পণ্ড করা, সব কাজে বাধা দেওয়া, কোনও কাজ পারলে হতে না দেওয়া, এই ছিলো বিরোধী দলের চেহারা। সঙ্গে বিধানসভায় নজিরবিহীন ভাঙচুর থেকে শুরু করে দিনের পর দিন জাতীয় সড়ক আটকে রাখার চরম অসৌজন্য বিরোধী দলের কাছ থেকে দেখতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। রেলমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যে রেলের কোনো অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারকে আমন্ত্রণ করেননি মমতা। এসব নিয়ে বিরোধী দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কোনও সাংবাদিক প্রশ্ন করলে, তাদের শুনতে হয়েছে চরম অসৌজন্যের শালীনতাবর্জিত পালটা প্রশ্ন, 'সি পি এম কত টাকা দিয়েছে আপনাকে এই সব প্রশ্ন করার জন্য?'

এই যখন সৌজন্যের চেহারা মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর দলের, তারা আজ সরকারে আসায় 'সততা'-র চেয়েও 'সৌজন্য'-এর প্রলেপ লাগানো যে বড় দায়, এটা বুঝেছে মিডিয়া। তাই দায়িত্ব নিয়েছে সেই আনন্দবাজার। আর তা করতে গিয়ে হাস্যকর সব উপস্থাপনা করেছে তারা মমতা ব্যানার্জির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে।

২০০৬ সালেও সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলো যে তৃণমূল, তারা এবার সরকারে এসে তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বিরোধী দল বামফ্রন্টের নেতা, বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর পর কেউই কিন্তু বলেননি যে, উপস্থিত থাকা হবে না। কেউই বলেননি যে, বয়কট করা হবে। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম থেকেই এই পর্বে নিজেরাই তাদের খবরে জনমানসে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো যেন বামফ্রন্ট বা সি পি আই (এম) যাবে না নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে! এজন্য তারা এমনকি সি পি আই (এম) যে কোনও দিনই সৌজন্য মানে না, এমন ভিত্তিহীন ধারণা ছড়াতে অবলীলায় ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে খবর লেখা শুরু করলো। বলা হলো, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মারা যাওয়ার পর তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কেউ নাকি যাননি! অথচ বিমান বসু গিয়েছিলেন। বেমালুম মিথ্যে বলা হলো আমাদের নামে। বরং সিদ্ধার্থ রায়ের মৃতদেহ কংগ্রেস অফিসে কিছুতেই নিতে না দিয়ে মমতা ব্যানার্জিই যে কত অসৌজন্য দেখিয়েছিলেন, তা আনন্দবাজার ভালোই জানে। বলা হলো আরও সব এমন উদাহরণ, প্রতিটাই অসত্য। বিমান বসু তাই সঙ্গত কারণেই সাংবাদিকদের বলেছেন, 'সৌজন্য কাকে বলে তা আমরা আনন্দবাজারের কাছ থেকে শিখবো না।' সেই আনন্দবাজার করলো কী তৃণমূলী সরকারের শপথ গ্রহণের দিন বড় বড় করে শিরোনাম করে বোঝালো, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ বামফ্রন্ট নেতাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি এমন 'মোক্ষম চাল' দিলেন যে, তাঁরা অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছেন! বুঝুন কাণ্ড! শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধীদেরও আমন্ত্রণ জানানোর স্বাভাবিক প্রচলিত রীতি নাকি 'মোক্ষম চাল'! আর বামফ্রন্ট যেহেতু তৃণমূলের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, কিংবা আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়ের ভাষাতেই বলি, 'সমাজে প্রচলিত আচরণবিধি মানিয়া চলার অপবাদ' দেওয়া কঠিন, সেই মমতা ব্যানার্জির মতো নন বামফ্রন্টের নেতারা, তাই তাঁরা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়াটা নাকি 'বাধ্য হয়ে' যাওয়া! ২২শে মে তারিখেও আনন্দবাজার তাদের 'যদি হয় সুজন' সম্পাদকীয়তে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বামফ্রন্ট নেতা বা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের যোগ দেওয়াকে ব্যাখ্যা করেছে এইভাবে, ''তাঁহারা গরহাজির থাকিলে তাঁহাদের অসৌজন্য লইয়া সমাজে ধিক্কার উচ্চারিত হইবে বুঝিয়াই এক প্রকার বাধ্য হইয়াই হয়তো তাঁহারা আসিয়াছিলেন।'' না। বাধ্য হয়ে আসা নয়। বরং সৌজন্য শিষ্টাচার সংসদীয় রীতি মেনেই আসা। যা মমতা ব্যানার্জির অভিধানে নেই। ভোটের ফল প্রকাশের পরেই পরিবর্তনের নামে আমাদের নেতৃত্ব স্তর থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থক পর্যন্ত সাতজনকে খুন করেছে তৃণমূল। হাজার হাজার মানুষ এখনই ঘরছাড়া। গ্রামছাড়া। অস্ত্র উদ্ধারের নামে আমাদের পার্টি অফিসে তৃণমূলীরা হানা দিচ্ছে। অস্ত্র গুঁজে দিয়ে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরির চেষ্টা করছে। ধর্ষিতা হচ্ছেন মা-বোনেরা। এই রকম পরিস্থিতিতেও বামফ্রন্টের নেতারা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন কারণ বামফ্রন্ট জানে কোন্‌টা সৌজন্য, কোন্‌টা শিষ্টাচার, কোন্‌টা কী রীতি। শুরু থেকেই যা চলছে তৃণমূলী সরকারের আমলে, তা চলতে থাকলে, বাড়তেই থাকলে কী করতে হবে, তা-ও জানেন বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা। কোনটা আনন্দবাজারের থেকে তা শেখার কোনও প্রয়োজন নেই আমাদের। যে আনন্দবাজার এক সময় জ্যোতি বসুকে 'অগস্ত্য যাত্রার পথিক' বলেছিলো, অনিল বিশ্বাসকে 'আলিমুদ্দিনের মোড়ল' বলেছিলো, বিমান বসুকে 'বিদ্যাসাগর' বলে কটাক্ষ করেছিলো, যে আনন্দবাজার আমাদের পার্টির আরও অনেক নেতাকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে কখনও খবর, কখনও সম্পাদকীয় লেখে, তারা আজ বলছে, 'অসৌজন্য ও অভদ্রতার জন্য' নাকি বামেদের ক্ষমা চাইতে হবে!

কেন ওরা বামফ্রন্টের নামে এইভাবে অসৌজন্যের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে? একটাই কারণ, নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে 'সৌজন্যের প্রতীক' সাজানোর কঠিন কাজটি সারতে হবে! কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই যে মিডিয়ার সেই কঠিন কাজ আরো কঠিন করে দিচ্ছেন নিজের অভ্যাসমতো, তা গোপন থাকছে না। এমনকি আনন্দবাজারও নিজেদের লেখায় চাপতে পারছে না তৃণমূলী অসৌজন্যের আশঙ্কাকে। উদাহরণ দিই। কেন আমাদের পার্টির নেতা গৌতম দেব তৃণমূলী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গেলেন না, তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আনন্দবাজার গত ২১শে মে নিজেদের মতো করে একটি খবরে লিখেছে, গৌতম দেব নির্বাচনী প্রচার পর্বে যেভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন, তাতে শপথ অনুষ্ঠানে গেলে তাকে টিপ্পনির মুখে পড়তে হতো আশঙ্কা করেই নাকি তিনি যাননি। আমাদের প্রশ্ন হলো, শপথ অনুষ্ঠানে টিপ্পনি শুনতে হবে এটা যদি বাস্তব হয়, তাহলে তৃণমূলের 'সৌজন্য' নিয়ে এত ঢাক পেটাচ্ছে কেন আনন্দবাজার? কয়লার ময়লা যে ধুলেও যায় না, তার আরও একটি প্রমাণ মিলেছে শনিবার ২১শে মে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে মহাকরণে বর্তমান পত্রিকার সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পেট্রোল, ডিজেলের উপর যে সেস নেয় রাজ্য সরকার, তা নতুন সরকার প্রত্যাহার করে নেবে কিনা। ঘটনা হলো, মমতা বিরোধী নেত্রী হিসাবে বার বার এই দাবি জানাতেন কেন্দ্রের নীতিকে আড়াল করার জন্য। এখন মমতার তা করে দেখানোর কথা। তাই বর্তমান পত্রিকা প্রশ্ন করেছিলো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কী উত্তর দিয়েছেন? তিনি তাঁর সৌজন্যের স্বরূপ বেআব্রু করে বলেছেন, 'এসব প্রশ্ন আগের সরকারকে করেননি কেন?'

সৌজন্য! মমতা স্টাইল। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে এই স্টাইলেই মমতা ব্যানার্জি গাইঘাটার এক সভায় বলেছিলেন, 'সাংবাদিকদের কিছু পাইয়ে দিতে পারিনি তো, তাই ওরা আমরা বিরুদ্ধে লিখছে।' সেবার ভোটে হারার পর মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, 'সাংবাদিকদের খুব তেল হয়েছে।' এমন সৌজন্য যাঁর, তাকে 'সৌজন্যের প্রতীক' বানিয়ে এখন বাজারে ছাড়তে কসরত যে করতেই হবে মিডিয়াকে, তা বলাবাহুল্য।

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে
আজ দেশে সুতোকল বন্ধ

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, ২২শে মে—দেশজুড়ে সোমবার সুতোকলগুলি বন্ধ থাকবে কাপাস তুলোর সুতোর রপ্তানির উপর থেকে বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলস ইন্ডাস্ট্রি (সি আই টি আই) সূত্রে রবিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

গোটা দেশে এখন ৩,০০০ সুতোকল আছে। সবগুলিই সোমবার বন্ধ থাকবে। সি আই টি আই-র মহাসচিব ডি কে নায়ার বলেছেন, এইসব সুতোকলের মূল কেন্দ্রগুলি হলো তামিলনাডু এবং পাঞ্জাবে। ২৩শে মে সুতোকলগুলি বন্ধ রাখার পাশাপাশি এক সপ্তাহের জন্য উৎপাদন ৩৩ শতাংশ হ্রাস করা হবে। এখন দেশে প্রতিদিন সুতো উৎপাদনের পরিমাণ ১ কোটি কেজি। মে মাসের শেষে অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। একদিনের ক্লোজার এবং উৎপাদন কমানোর ফলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ২০০ কোটি টাকা এবং ৫০০ কোটি টাকা।

গত আর্থিক বছরে রপ্তানির পরিমাণ ৭২ কোটি কেজিতে বেঁটে দেওয়া হয়। ফলে মিলগুলিতে প্রচুর মজুত তৈরি হচ্ছে। সি আই টি আই-র চেয়ারম্যান শিশির জয়পুরিয়া বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ফলে আমদানিকারকেরা চলে যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তানের মতো অন্যান্য বাজারে। সুতোকলগুলিতে মজুত উৎপাদনের পরিমাণ এখন ৫০ কোটি কেজি। এত উৎপাদন জমে যাওয়ায় চলতি মূলধনে টান পড়ছে। শুধু বিশ্ববাজার নয়, অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা কমে গেছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমার কারণ হলো ক্রেতাদের মনে ধারণা জন্মেছে, সুতোর দাম আরো কমবে। তাছাড়া ১০.৩ শতাংশ উৎপাদন শুল্ক বসানোর ফলে বস্ত্র প্রস্তুতকারীদের দিক থেকেও চাহিদা কমে গেছে।

মুম্বাইয়ের খবর : তুলোর রপ্তানির উপর থেকে পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার দাবি জানালো কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সি এ আই)। তারা এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিক থেকে সুতো রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দাম ৩০ শতাংশ পড়ে গেছে।

সি এ আই সভাপতি ধীরেন শেঠ বলেছেন, রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ভারতীয় তুলোচাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এরকম চললে তুলো চাষও মার খাবে।

মধুবনীতে জিপ-ট্রেনের
সংঘর্ষে নিহত ২০

সংবাদ সংস্থা

মধুবনি (বিহার) , ২২শে মে — জিপে চড়ে রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রশিং পেরোতে গিয়ে আবারও এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হলেন ২০জন গ্রামবাসী। নিহতদের মধ্যে ১৯জনই মহিলা। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪জন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রবিবার বিহারের মধুবনি জেলায় সমস্তিপুর ডিভিসনের ভারিয়া-বিষ্ণুপুর গ্রামের মাঝেই প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। 

এই লেভেল ক্রসিং পেরোনর সময় জিপ গাড়িটিকে ধাক্কা মারে দুরন্ত বেগে ছুটে আসা নিজামুদ্দিন-জৈনগর গরিব রথ এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনার পরে ট্রেনের ধাক্কায় জিপ গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে কয়েক ফুট দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১২জন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান আরো ৩জন। বাকি পাঁচজন মারা যান হাসপাতালে। এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী রেলমন্ত্রকের অপদর্থতা। প্রহরীবিহীন অবস্থায় লেভেল ক্রশিংগুলি পড়ে থাকলেও নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থাই করেনি রেল। দেশের সমস্ত প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রশিংয়ে কর্মী নিয়োগ করবেন বলে গতবারের রেল বাজেটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। অথচ এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আনন্দের মুহূর্তেই ঘটে যায় এদিনের দুর্ঘটনা। গ্রামের মুখিয়া নির্বাচনে জয়ী অনিরুদ্ধ যাদবের আত্মীয়রা গাড়ি বোঝাই করে হইহই করে রেললাইন পার হচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময়ই লাইন দিয়ে দ্রুত বেগে ছুটে আসছিলো গরিব রথ এক্সপ্রেস। আনন্দে মশগুল থাকায় জিপের চালকও লক্ষ্য করেননি যে দ্রুত ধেয়ে আসা ট্রেনটিকে। চোখের পলকে তীব্র কান ফাটানো আওয়াজে জিপকে ধাক্কা মারে ঘাতক ট্রেনটি। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নে‍মে আসে আশেপাশের গ্রামগুলিতে। 

কিছু বুঝে ওঠার আগেই তীব্র আর্তনাদে ছিটকে পড়ে ২৪টি রক্তাক্ত শরীর। আওয়াজ শুনেই ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা ছুটে গিয়ে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে ট্রেনলাইন। দলাপাকানো রক্তাক্ত লাশগুলিকে উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। নিহতদের মধ্যে অনেকেরই হাত-পা থেঁতলে গিয়েছে। নিহতদের ১৯জনই মহিলা। ট্রেনের সামনের দিকের গার্ডে ধাক্কা লেগে তাঁদের দেহগুলো দলা পাকিয়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে দ্বারভাঙা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। সরোজ নামের জিপের চালকও আহতদের মধ্যে রয়েছেন। 

কিন্তু এই ঘটনার পর রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার কয়েকঘণ্টা পরেও রেলের কোনো আধিকারিককে ঘটনাস্থলে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এ ঘটনার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ। রেললাইনে অবরোধে বসেন তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে। অবরোধ করে রাখেন ঘাতক ট্রেনটিকে। এতবড় মর্মান্তিক ঘটনার পরেও ঘটনাস্থলে এদিন রেলের বড়মাপের কোনো আধিকারিককেই দেখা যায়নি। এমনকি নিহতদের পরিবারের জন্য কোনো ক্ষতি পূরণও ঘোষণা করেনি রেলমন্ত্রক। আহতদের চিকিৎসার বিষয়েও রেলমন্ত্রকের কোনো হেলদোল নেই।

গোটা দেশে ১৫হাজার ৯৯৩টি লেভেল ক্রশিং রক্ষীবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি ২০১০-১১সালের রেল বাজেট পেশ করতে গিয়ে এই কথা জানিয়েছিলেন। পাঁচ বছরের মধ্যে লেভেল ক্রশিংয়ে কর্মী নিয়োগ হবে বলে কথা দিয়েছিলেন। দু'বছর হয়ে গেলেও কর্মী নিয়োগে এক পা-ও তিনি এগোতে পারেননি। প্রহরীবিহীন অবস্থায় লেভেল ক্রশিংগুলি পড়ে থাকার জন্য অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। নিহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

দুর্ঘটনার পরপরই নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তিনি নিহতদের পরিবারের পিছু একলক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সরকারী সূত্রে জানানো হয়েছে তাঁদেরকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে ৫০হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়াও আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করার জন্য জেলার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রেলমন্ত্রকের কাছে দাবি জানিয়েছেন নীতিশ কুমার। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা লেভেল ক্রশিংয়ে গেট বসানোরও তিনি দাবি করেছেন। 

রেলমন্ত্রী থাকার সময় মমতা ব্যানার্জি বলেছেন তিনি যা কথা দিয়েছিলেন তা সমস্তটাই বাস্তবায়িত করেছেন। তাঁর দাবি এমন কাজ হয়েছে, যা অতীতে কোনো রেলমন্ত্রী এত কাজ করতে পারেনি। এদিনের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো মমতা ব্যানার্জি-র কথা এবং কাজে আসমান জমিন ফারককে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে রেলেমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন। বাস্তবে কোন কাজই হয়নি তার আরও একটি প্রমাণ মধুবনির এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। 

পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে রেলের এক অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন 'এবার থেকে রেলের পরিবার, বাঙালার পরিবার দু'টোই একসঙ্গে দাপিয়ে চলবে।' রেলমন্ত্রী ছাড়লেও নিয়ন্ত্রণ যে তাঁর হাতে, তাও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বলে 'অমি এটাও দেখব ওটাও দেখব'। মমতা ব্যানার্জির একান্ত অনুগ্রহভাজন কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুকুল রায়কে রেলের রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগের মধ্যে দিয়ে এই কথার প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দায়িত্বে রেলেকে বেহাল করে ছেড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের আবস্থা কি দাঁড়ায় এখন সেটাই দেখার।

মুখ্যমন্ত্রীর বোধোদয়!

ক্ষমতা পাওয়ার দ্বিতীয় দিনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন সরকারী কর্মচারীরা সকলেই বেতন পাবেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন কর্মচারীদের বেতন দেবার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আগে থেকেই কোষাগারে মজুত রয়েছে। নতুন সরকার যদি একমাস পরে শপথ নিতো, তাতেও কর্মচারীদের বেতন দিতে কোনো সমস্যা হতো না। শপথ গ্রহণের আগেরদিনই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কর্মীদের বেতন, পেনশন এবং ঋণের সুদের অর্থ সংস্থান করা আছে। বিরোধীনেত্রী হিসেবে গত তিনমাস ধরে যিনি ক্রমাগত চিৎকার করে গেছেন রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাই কর্মচারীরা মাইনে পাবেন না। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বললেন, অর্থের সমস্যা নেই, সকলেই বেতন পাবেন। তাহলে এতদিন কি তিনি চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে চিলের পিছনে ছুটছিলেন? একবারও দেখে নিলেন না কানটা কানের জায়গায় আছে কিনা? আসলে তখন নির্বাচনের মুখে মানুষকে বিভ্রান্ত করে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে ভোটে ফায়দা তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাই পরিকল্পিতভাবেই রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে অসত্য প্রচার করা হয়েছিল। বিরোধীরা বিশেষ করে নেত্রী যখন বলেছেন রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ঘোর সঙ্কটে, তখন বাজারী পত্রিকা দোহারির ভূমিকা নিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে প্রচার করবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল। প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনীসভায় এবং অন্যত্র নেত্রী নিয়ম করে রাজ্য সরকারের আর্থিক দুরবস্থার গল্প প্রচার করতেন। আর প্রতিদিনই তা সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত হতো। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবার পর এই ধরনের বানানো গল্প বলার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। তাই নেত্রী এ প্রসঙ্গে আর বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি। তখন নেত্রীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় বাজারী পত্রিকা। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বাজারী পত্রিকা পর পর তিনদিন আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে দেউলিয়া প্রমাণ করার জন্য। নানাদিক থেকে নানা ভুলভাল ও মনগড়া তথ্য হাজির করে তার ভুলভাল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তারা মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করে, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে নেত্রীর অভিযোগ সত্য। একাজে তারা সেই অর্থনীতি লেখকদের কাজে লাগায়, যাঁরা নীতিগতভাবে বাম-বিরোধী। এঁদের কাজই হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে বামফ্রন্টকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। গল্পের গোরু গাছে চড়ার মতো এঁরা অর্থনীতির এমন বেহাল অবস্থা দেখাতে শুরু করেন যে, তাতে নাকি খোদ প্রধানমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন! রাজ্যের আর্থিক হাল ফেরাতে নাকি প্রধানমন্ত্রী 'টিম'ও গড়ে ফেলেছেন। ৩৪ বছর পর আচমকাই এরা আবিষ্কার করলো বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের অর্থনীতিকে এতটাই খারাপ করে দিয়েছে যে, কর্মীদের বেতন দেওয়াও সম্ভব হবে না।

এমন আষাঢ়ে গল্প প্রচারের মধ্যেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন এবং প্রমাণ করে দেন বিরোধীদের অভিযোগ এবং বাজারী পত্রিকার কলমচিদের প্রচার আসলে মিথ্যার বেসাতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর বাজারী পত্রিকা রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে ট্যা-ফোঁ করার সাহস দেখায়নি। শেষে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাঁর গত তিনমাসব্যাপী প্রচারকে অসত্য প্রমাণ করে বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যে অর্থনীতি নিয়ে এতদিন যা বলেছিলেন তা ঠিক নয়। যা বলেছিলেন তা না জেনে না বুঝে আন্দাজে বলেছিলেন। এখন মহাকরণে বসে জেনে বুঝে বলছেন বেতন দিতে অসুবিধা নেই। এতদিন বিরোধীরা যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল তার বেশিরভাগই যে মিথ্যা তা অচিরেই প্রমাণ হয়ে যাবে।

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy

এনায়েতপুর

শিলদার ইনস্যাস মিলল সিপিএম অফিসের অদূরে

নিজস্ব প্রতিবেদন

রাজ্য জুড়ে অস্ত্র উদ্ধারে অন্য মাত্রা জুড়ল একটা ইনস্যাস রাইফেল।

রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের এনায়েতপুরে সিপিএমের কার্যালয়ের অদূরে যৌথ বাহিনীর তল্লাশিতে একটি একে ৫৬-সহ যে সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যেই রয়েছে শিলদার ইএফআর ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া ইনস্যাস রাইফেলটি। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে ওই ক্যাম্পে হামলা চালায় মাওবাদীরা। নিহত হন ২৪ জওয়ান। লুঠ হয় ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। লুঠ হওয়া সেই অস্ত্রেরই একটি কী ভাবে সিপিএমের মণিদহ লোকাল কমিটি অফিসের অদূরে পৌঁছল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর।

এনায়েতপুর থেকে উদ্ধার হওয়া ইনস্যাস রাইফেল। রবিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

মহাকরণে এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, "ইনস্যাস রাইফেলটি শিলদা ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া। ওই ক্যাম্পের রাইফেলের নম্বরের সঙ্গে ইনস্যাসটির নম্বর (আরসেনাল নম্বর ১৬৫১-৫০৭৬, এআরআর ৫৯৪২) মিলিয়ে দেখা হয়েছে। লুঠ হওয়া এই রাইফেলের সঙ্গে মাওবাদী বা সিপিএমের যোগাযোগ আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।" তিনি জানান, এডিজি সিআইডি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১টি একে ৫৬, ১টি ইনস্যাস, ৮টি .৩১৫, ১টি .৩৭৫-সহ মোট ১৪টি রাইফেল, ২২টি পাইপগান। সঙ্গে প্রচুর বোমা, কার্তুজ ও মুখোশ। বেশ কিছু অস্ত্রে লেখা 'এমএলসি'। পুলিশের অনুমান, এমএলসি বলতে মণিদহ লোকাল কমিটিই বোঝানো হয়েছে। ডিজি বলেন, "প্লাস্টিকে মুড়ে ওই সব অস্ত্র রাখা ছিল। গর্তটি খুব পুরনো নয় বলে আমাদের মনে হয়েছে।"

তবে প্রত্যাশিত ভাবেই এনায়েতপুর থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে তাঁদের দলের যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরুপম সেন এ দিন বলেন, "মাঠের মধ্যে ঢিপি থেকে অস্ত্র ধরা পড়েছে। পার্টি অফিস থেকে পাওয়া যায়নি।" সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আর এক সদস্য বিনয় কোঙারের বক্তব্য, "ঘটনাস্থল পার্টি অফিসের পিছনে দেড় কিলোমিটার দূরে। এ নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হচ্ছে।" ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল আবার জানান, পার্টি অফিস থেকে দূরত্বটা এক কিলোমিটারেরও কম।

পটাশপুরে সিপিএমের কার্যালয় থেকে উদ্ধার জলপাই রঙা পোশাক। নিজস্ব চিত্র।

সিপিএম নেতাদের পাল্টা অভিযোগ, অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের নাম 'জড়িয়ে' মামলায় 'ফাঁসানো' হচ্ছে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, "এক সময় যেখানে মাওবাদীদের প্রভাব ছিল, অস্ত্র তো সেখান থেকেই পাওয়া গিয়েছে!" সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের সংযোজন, দেড় বছর আগে মণিদহ লোকাল কমিটি অফিসেই হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। তার আগে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া, চাঁদড়া-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়েছিল মাওবাদী-জনগণের কমিটি। ফলে, ওই এলাকায় 'মাওবাদীদের পুঁতে রাখা' অস্ত্র উদ্ধার অসম্ভব নয়।

অন্য দিকে, তৃণমূল সরব হয়েছে সিপিএম-মাওবাদী 'যোগাযোগ' নিয়ে। তাদের দাবি, কনকাবতী, এনায়েতপুরে 'বেস ক্যাম্প' করে জঙ্গলমহল 'পুনর্দখল অভিযান' শুরু করেছিল সিপিএম। ফলে, সেখানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত করা হয়। পুলিশ-প্রশাসনে এই অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পুলিশ তৎপর হয়নি। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, শিলদা ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া অস্ত্র এনায়েতপুরে উদ্ধার হওয়াতেই স্পষ্ট, মাওবাদীদের সঙ্গে সিপিএমের যোগ রয়েছে। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দীনেন রায় বলেন, "ঘটনার তদন্ত দাবি করছি। যারা বেআইনি অস্ত্র মজুত করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।" ডিজি-ও বলেছেন, "এনায়েতপুর এলাকায় সিপিএমের প্রভাব রয়েছে। তাই আমরা মনে করছি, ঘটনায় সিপিএমের জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।"

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সিপিএম কর্মীকে জেরা করে এনায়েতপুরের বাসিন্দাদের একাংশ জানতে পারেন, সিপিএমের মণিদহ লোকাল কমিটি অফিসের অদূরে, পারুলিয়া-বুড়িথান এলাকার একটি মাঠে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র পোঁতা আছে। কোথায় অস্ত্র পোঁতা রয়েছে, ওই কর্মী তা-ও দেখিয়ে দেন। সেই সূত্র ধরেই এ দিন সকালে তল্লাশি শুরু করে যৌথ বাহিনী। মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় বস্তা। সেখানেই ছিল অস্ত্রগুলি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ইনস্যাসের পাশাপাশি তাঁদের ভাবাচ্ছে একে ৫৬ রাইফেলটিও। কী ভাবে সেটি জেলায় পৌঁছল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেই সঙ্গে এনায়েতপুর থেকে পাওয়া বেশ কিছু রাইফেলের 'আরসেনাল' নম্বর তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এনায়েতপুরে সিপিএম অফিসের অদূরে উদ্ধার হওয়া এই সব অস্ত্রের মধ্যেই
রয়েছে শিলদার ইএফআর ক্যাম্প থেকে লুঠ হওয়া রাইফেল। — রামপ্রসাদ সাউ

চাঁদড়ার কেশাশোল থেকেও এ দিন ১৬টি রাইফেল, একটি হাতকামান, ৪৯০টি বোমা, পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। রাইফেলগুলিতে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির স্ট্যাম্প রয়েছে। শালবনির দহ থেকে উদ্ধার হয়েছে দু'টি গ্রেনেড। আনন্দপুরের ঝাঁটিয়ারা থেকে ৫টি বন্দুক ও গুলি, খড়গপুর ১ ব্লকের জিনশহর থেকে দু'টি বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। চন্দ্রকোনার ভালুককণ্ডু ও গোপালপুর থেকে ২টি পিস্তল, গুলি, একটি হাতকামান পাওয়া গিয়েছে। জেলার সাঁকরাইলে সিপিএমের কুলটিকরি লোকাল কমিটি অফিস থেকে ১টি পাইপগান ও ৫ রাউণ্ড গুলি মিলেছে।

লাগোয়া জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে সিংদায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয় থেকে এ দিনই উদ্ধার হয়েছে ৫৮ জোড়া 'ক্যামোফ্লাজ' পোশাক। র‍্যাফ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাই সাধারণত এই পোশাক ব্যবহার করেন। সিপিএমের সিংদা জোনাল কমিটির অফিসে কিছু লোক গোপনে জিনিসপত্র রেখেছে, এমন খবর ছড়ায় শনিবার রাতেই। পার্টি অফিস ঘেরাও করেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী জনতার চোখে ধুলো দিতে এই পোশাক ব্যবহার করত। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। এ দিন তল্লাশি চলাকালীন পুলিশ লাঠি চালায় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। প্রতিবাদে তারা এগরা-বাজকুল রোড অবরোধ করে। ডিজি বলেন, "ওই পার্টি অফিসের তালা খুলে পোশাকগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।"

বস্তুত, ভোটের আগে রাজ্যে যতই বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হোক না কেন, তা যে আসলে 'হিমশৈলের চূড়া' তার প্রমাণ মিলেছে এ দিনও। এ দিন দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের একটি মেছোভেড়ি থেকে মেলে ২টি স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং ২০৬ রাউণ্ড গুলি। রাজারহাট-নিউটাউন এলাকার খামার থেকেও পুলিশ ২টি মাস্কেট ও ২০০টি কার্তুজ পেয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে ১৫টি তাজা বোমা মিলেছে। হুগলির গোঘাটের মান্দারণের কাছে ২টি মাস্কেট, আরামবাগের চাঁদুরের চাষিপাড়ায় ১টি পাইপগান এবং ৫টি কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিশ্বনাথ সামন্ত নামে এক সিপিএম কর্মীকে ধরেছে পুলিশ। বাড়ি থেকে বোমা মেলার অভিযোগে শনিবার রাতের দিকে বীরভূমের লাভপুরে গ্রেফতার হন শান্তিরাম বাগদি নামে এক সিপিএম কর্মী। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের কৃষ্ণবাটি গ্রামে এক সিপিএম নেতার বাড়ি থেকেও একটি ওয়ানশটার মিলেছে। অভিযুক্ত কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের বালসি লোকাল কমিটির সদস্য। তাঁর দাবি, "আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে তৃণমূল মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে।" বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহের জঙ্গল থেকে এ দিন একটি বস্তায় লাল কাপড়ে মোড়া ৩টি একনলা বন্দুক ও ৯টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। বর্ধমানের রানিগঞ্জে বার্ন স্ট্যাণ্ডার্ডের বন্ধ অফিসেও সিপিএম অস্ত্র মজুত করেছে বলে অভিযোগ ছিল তৃণমূলের। তবে সেখানে পুলিশ কিছু পায়নি।

ডিজি বলেন, "সারা রাজ্যেই বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি জেলাকে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।"

শিলদা ও তার পর

২০১০
 ১৫ ফেব্রুয়ারি লুঠ ১৬টি ইনস্যাস, ১৯টি এসএলআর, ৮টি একে ৪৭, একটি কার্বাইন ও নাইন এমএম পিস্তল

উদ্ধার
 ২৬ জুলাই মেটালার জঙ্গল থেকে একটি এসএলআর
 ৩১ জানুয়ারি লক্ষ্মণপুর থেকে একটি একে ৪৭

২০১১
 ১৮ ফেব্রুয়ারি বাগঘরা থেকে একটি ইনস্যাস
 ১১ মার্চ জামবনির চনসরা থেকে একটি একে ৪৭
 ১৯ মার্চ বিনপুরের আমাকোলি থেকে একটি এসএলআর
 ২২ মে এনায়েতপুর থেকে একটি ইনস্যাস

ইউপিএ-র বর্ষপূর্তিতে বার্তা

দুর্নীতি দমন, মূল্যবৃদ্ধি হ্রাসই লক্ষ্য কেন্দ্রের

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

ক দিকে দুর্নীতি দমন করে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনার অঙ্গীকার ও মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতিতে রাশ টেনে সুরাহার প্রতিশ্রুতি। অন্য দিকে কৌশলে উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক স্থায়িত্বের প্রসঙ্গটি জনমানসে উস্কে দেওয়া। কেন্দ্রে টানা সাত বছর শাসনের পর এই প্রথম যখন উপর্যুপরি দুর্নীতির ঘটনা ও মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতায় আক্রান্ত সরকার, তখন আস্থা ফেরাতে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এমনই বার্তা দিলেন মনমোহন সিংহ-সনিয়া গাঁধী।

কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার আজ দু'বছর পূর্ণ করল। সাত রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবনে আজকের অনুষ্ঠান ছিল তারই উদ্‌যাপন ও সরকারের সাফল্যের প্রগতিপত্র প্রকাশের। ১১৮ পৃষ্ঠার যে রিপোর্টে মন্ত্রক ধরে ধরে সরকারের সাফল্যের বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে। দিশা দেখানো হয়েছে আর্থিক সংস্কার ও বৃদ্ধির।

স্বাভাবিক ভাবেই এমন অনুষ্ঠানে নেতিবাচক বিষয় স্থান পায় না। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়েই আজ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলতে হল সনিয়া-মনমোহনকে। প্রধানমন্ত্রী এ-ও স্বীকার করে নিলেন, "টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন, কমনওয়েলথ গেমসকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মানুষের মনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা সঙ্গত।" এই সঙ্গেই মানুষের আস্থা ফেরাতে মনমোহনের আশ্বাস, "দুর্নীতি দমনে সরকার বদ্ধপরিকর। দুর্নীতি মোকাবিলায় আইন প্রণয়ন-সহ সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।" দোষীদের যে ছাড়া হবে না, সেই বার্তাও আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন সনিয়া-মনমোহন।

সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে লোকপাল বিল পেশ করার ঘোষণা করে একই বার্তা দিয়েছেন ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীও। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের অগ্রাধিকার গোড়া থেকেই স্পষ্ট। তা হল, এক আর্থিক বৃদ্ধির হারকে উঁচুতে বেঁধে রাখার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের নাগালে রাখা। দুই, উন্নয়নের সুফল যাতে সব স্তরের মানুষ পান, বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ ও পিছিয়ে পড়া এলাকা, সে দিকে লক্ষ্য রাখা। তিন, আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং চার, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

দুর্নীতি দমন ও মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়ার পরেই মনমোহন-সনিয়া আজ কৌশলে রাজনৈতিক স্থায়িত্বের প্রশ্নটিও খুঁচিয়ে দিয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সব থেকে বড় সাফল্য হল, দেশকে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব দেওয়া। সেই স্থায়িত্ব থাকলেই আর্থিক সুস্বাস্থ্য ফিরবে ও মানুষের সুরাহা হবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, "গত সাত বছর ধরে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব দিয়েছে ইউপিএ সরকার। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হল রাজনৈতিক স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করা। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের মানুষ যে বিপুল হারে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন, তাতে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।" কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, মনমোহন এই বার্তা দিতে চেয়েছেন আন্না হাজারে ও তাঁর সমর্থকদের।

যাঁরা লোকপাল বিল নিয়ে আন্দোলনে নেমে সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর মানুষের আস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। তবে সনিয়া গাঁধীর আজকের বক্তব্যের নিশানা ছিল কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দুই দল— বিজেপি ও বাম।

কংগ্রেস সভানেত্রীর কথায়, "সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের তিনটিতেই জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও ইউপিএ। পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহাসিক জয় হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই সঙ্গে অসম, কেরলের ফলও ভালো হয়েছে কংগ্রেসের। প্রতিটি রাজ্যের ভোটে স্থানীয় খুঁটিনাটি বিষয় থাকলেও সার্বিক ভাবে একটা বিষয় ঠিক যে, মানুষ একটি কার্যকরী সরকার চায়।" কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, "ইউপিএ-র জয়ের প্রসঙ্গ তুলে সনিয়া এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, কংগ্রেস তথা ইউপিএ-র ওপর মানুষ আস্থা হারাননি। কেন্দ্রে বিজেপি ও বামেরা হাত মিলিয়ে সরকারকে অস্থির করতে চাইলেও বিধানসভা ভোটে দু'পক্ষই ধরাশায়ী হয়েছে।" এর পাশাপাশি আজ দুর্নীতি প্রশ্নে বিজেপি-র সমালোচনাও করেছেন সনিয়া। তাঁর কথায়, "প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার ব্যাপারে বড় বড় কথা বললেও অনেক বিরোধী দল রয়েছে, যারা তা কাজে করে দেখায় না।"

এ সবের পরেই সামাজিক সংস্কারের প্রশ্নে সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি তুলে ধরেছেন মনমোহন-সনিয়া। তথ্যের অধিকার আইন, একশো দিনের কাজ, অরণ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার আইন পাশের মতো সরকারের 'সাফল্যের' বিষয়গুলি তুলে ধরে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই খাদ্য সুরক্ষা আইন পাশ করতে চলেছে সরকার। সেই সঙ্গে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে জমি অধিগ্রহণ সংশোধনী বিলও পেশ করা হবে।

কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েনি। দলের অন্যতম নেতা অরুণ জেটলি বলেন, "সরকারের সাফল্য উদ্‌যাপনের মতো কিছু রয়েছে বলে কেউই মনে করে না। বরং দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বছরটি ছিল রাতের দুঃস্বপ্নের মতো।"

বার্তা দিয়েছেন সনিয়া-মনমোহন। পাল্টা বলেছে প্রধান বিরোধী বিজেপিও। শেষ পর্যন্ত আম-আদমির কাছে কোনটি পৌঁছল, সরকারের ওপর আস্থা অটুট থাকল কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

মমতার সাফল্য জোটেরই জয়, মত সনিয়াদের

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

শ্চিমবঙ্গের ঐতিহাতিক জয় আসলে ইউপিএ-রই সাফল্য। এই বার্তা দিয়ে সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহ আজ দেখাতে চাইলেন, দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক, তার স্থায়িত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। এবং স্থায়িত্ব ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে আজ ডিএমকে বা এনসিপি-র থেকে কংগ্রেসের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ শরিক তৃণমূল।

বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে বারে বারে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

যেমন, খুব স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক জয়কে ইউপিএ-র 'সাফল্য' হিসেবে তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন সনিয়া-মনমোহন। যেমন, ইউপিএ-র রিপোর্ট কার্ডে উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়েছে রেল মন্ত্রকের কাজের। যেমন, নৈশভোজে তৃণমূলের প্রতিনিধি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একই টেবিলে বসলেন মনমোহন, রাহুল গাঁধী, পি চিদম্বরমরা। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র উদ্ধার নিয়েও কথা হল। যেমন, গত সাত বছরে ইউপিএ-র যে সাফল্য, তার 'ভাগও' আজ তৃণমূলকে দিতে চাইলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

খতিয়ান হাতে

ইউপিএ সরকারের রিপোর্ট প্রকাশ করছেন মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধী। রবিবার। — পি টি আই

বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোটের জয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী এবং ইউপিএ-র সভানেত্রী। মনমোহন যখন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফলকে 'ঐতিহাসিক রায়' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, সনিয়া তখন বলেছেন, "মমতাজিকে অভিনন্দন। সত্যিই ঐতিহাসিক জয়।" কেরল ও অসমে কংগ্রেসের জয়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয়কে একই সারিতে রেখে সনিয়া জানিয়ে দিয়েছেন, সদ্য-সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের বার্তা হল, যারা কার্যকর ও দায়িত্বশীল সরকার দিতে পারে, মানুষ তাদেরকেই পুরস্কৃত করেন। ইউপিএ-র শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে 'সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে' এবং আর্থিক হাল ফেরাতে মমতার যেমন কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন, তেমনই কংগ্রেসেরও দরকার মমতাকে। মনমোহন-সনিয়ার বক্তব্যে এই পারস্পরিক নির্ভরতার বার্তাই স্পষ্ট হয়েছে। শুধু লোকসভায় সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদে ডিএমকে বা এনসিপি-র তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তৃণমূল ইউপিএ-র সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক। এ কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন সনিয়া-মনমোহন।

নৈশভোজে সুদীপবাবুর কাছেও মমতার কৃতিত্বের কথা বলেছেন মনমোহন। একই টেবিলে বসেছিলেন মনমোহন, ওমর আবদুল্লা, রাহুল গাঁধী, শরদ পওয়ার, পি চিদম্বরম এবং সুদীপ। তৃণমূল সাংসদ জানান, সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মমতা যা করেছেন, তা সত্যিই কৃতিত্বের। ভোটের আগে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির, মাওবাদী দমনে যৌথ অভিযানের নামে সিপিএমের এলাকা দখল নিয়ে বারবার কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। আজ সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যদের সুদীপ বলেন, "মমতার অভিযোগ কতটা ঠিক, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। জেলায় জেলায় প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে।" সুদীপ জানান, চিদম্বরমও তাঁর কথায় সায় দিয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছেও রিপোর্ট এসেছে, যে ২২টি সশস্ত্র শিবির থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তার ১৭টি সিপিএমের বলে চিহ্নিত হয়েছে। বাকি পাঁচটি চিহ্নিত হয়নি।

রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতার প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে সব থেকে বেশি প্রশ্ন তুলেছিল সিপিএম। আজ কিন্তু ইউপিএ-র রিপোর্ট কার্ডেও গত এক বছরে রেল মন্ত্রকের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, রেলে এই এক বছরে পরিকাঠামো তৈরির কাজ হয়েছে অন্য যে কোনও বছরের তুলনায় বেশি। কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণ, একশো নতুন ট্রেন, চারশো স্টেশনকে আদর্শ স্টেশনে রূপান্তরের পাশাপাশি যাত্রী ভাড়া না বাড়ানোকেও রেলমন্ত্রী মমতার কৃতিত্ব হিসেবেই দেখছেন ইউপিএ-নেতৃত্ব।

কিন্তু আজ সনিয়া যে ভাবে মমতার জয়কে ইউপিএ-র সামগ্রিক সাফল্য হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেস কি এই সাফল্যের ভাগ চাইছে?

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভোটের ফলের পরেই প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষ মমতার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসও নির্বাচনী লড়াইয়ে তৃণমূলকে সাহায্য করেছে। নির্বাচনের আগে জোট যাতে না ভাঙে, সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর ছিল সনিয়ার। ভোটের পরে এ কে আ্যান্টনি-শাকিল আহমেদকে দিয়ে সরকারকে সমর্থনের আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজে না গেলেও প্রণববাবু এবং চিদম্বরমকে পাঠিয়েছেন। কাজেই কংগ্রেস কৃতিত্বের ভাগ চাইছে না। বরং মমতার সাফল্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ইউপিএ-র মজবুত জোটের কথা বলতে চাইছে। আগামী দিনে রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজে কেন্দ্রের সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে মমতার। আবার সনিয়া-মনমোহন আজ যে ৭ বছরের ইউপিএ-জমানার 'রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা'-র সাফল্য দাবি করেছেন, মমতাকেও তার 'ভাগ' দেওয়া হয়েছে।

টাটার শুভেচ্ছা
নিজস্ব সংবাদদাতা

বিধানসভা ভোটে জয়ের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানালেন রতন টাটা। রবিবার রাতে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধারের শুভেচ্ছা-বার্তা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এসে পৌঁছয়। মুখ্যমন্ত্রী সেই চিঠি দেখেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সিঙ্গুরে ৪০০ একর জমি 'অনিচ্ছুক' কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, 'টাটাবাবুরা' চাইলে বাকি জমিতে কারখানা গড়তে পারেন। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে টাটারা কোনও পদক্ষেপ করেন কি না সেটা দেখার। কারণ, সিঙ্গুরের জমি এখনও টাটাদেরই হাতে। পাশাপাশি এটাও দেখার যে, এ দিনের শুভেচ্ছার উত্তরে রতন টাটাকে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বার্তা পাঠান কি না।

গ্রেফতার, পরে মুক্ত সচিন পায়লট

মায়ার পুলিশের হাতে আহতদের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা মনমোহনের

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

ন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহত কৃষকদের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেনি কেন্দ্র।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা-পারসল গ্রামে পুলিশি অত্যাচারে আহত কৃষকদের জন্য আজ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এবং তা ঘটনার দু'সপ্তাহের মধ্যেই!

কেন?

ভাট্টা-পারসলের কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে গাজিয়াবাদের দসনা জেল থেকে বেরিয়ে
আসছেন কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সচিন পায়লট। রবিবার।-পিটিআই

উত্তরপ্রদেশে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কৃষক অসন্তোষকেই এখন মায়াবতীর প্রত্যাবর্তনের পথে প্রধান কাঁটা করে তুলতে চাইছে কংগ্রেস। উত্তর ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটিতে আর এক বছরের মধ্যেই ভোট। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পরবর্তী অধ্যায়ে ঠিক যে রাস্তায় পরিবর্তন এসেছে বাংলায়, এ বার সেই পথই অনুসরণ করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। আর সেই প্রেক্ষাপটে এক দিকে যেমন গত কাল জাতীয় মহিলা কমিশন ভাট্টা-পারসলের ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে, তেমনই আজ গুরুতর আহত কৃষকদের পরিবার পিছু পঞ্চাশ হাজার টাকা ও অল্প আঘাত পাওয়া কৃষকদের পরিবার পিছু দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ভাট্টা-পারসলে কৃষকদের পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার পথে আইন ভেঙে গ্রেফতার হয়েছেন টিম রাহুলের অন্যতম সদস্য তথা কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সচিন পায়লট। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর 'ক্ষতিপূরণে'র সিদ্ধান্তে প্রবল চাপে পড়েছে মায়াবতীর সরকার। তাঁর দল, বিএসপি-র তরফে বলা হয়েছে, 'নিছক রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে'। পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত পুলিশদের কেন ক্ষতিপূরণ দিল না কেন্দ্র, সে প্রশ্নও তুলেছে তারা।

ভাট্টা-পারসলের কৃষকদের নিয়ে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। একদা নন্দীগ্রামে নিহত ও আহত কৃষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসের এক মুখপাত্র আজ বলেন, "আদালতের নির্দেশে নন্দীগ্রামের কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। তাই কেন্দ্রকে নিজে থেকে আর দিতে হয়নি।" ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতৃত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন, তখন কেন্দ্রে বামেরা ছিল সমর্থকের ভূমিকায়। তাই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সমীকরণ ভিন্ন। সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসকে আরও মজবুত করতে গেলে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ভালো ফল করা এখন দলের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

স্বাভাবিক ভাবেই সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও অসম ভোটে দলের ভাল ফল কংগ্রেসকে অনেকটাই অক্সিজেন যুগিয়েছে। তার পরেই সর্বশক্তি দিয়ে উত্তরপ্রদেশে 'পরিবর্তন' আনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মূল লক্ষ্য হল, এক বছর বাদে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের লড়াইটা মায়াবতী বনাম কংগ্রেসে পরিণত করা। আর তাই আন্দোলনে কোনও ছেদ না দিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইছে কংগ্রেস। মায়াবতীর বিরুদ্ধে রাহুল, সনিয়ার ঝাঁঝালো আক্রমণের পর আজ সে কারণেই ভাট্টা-পারসল যান সচিন পায়লট। তার আগে তিনি দসনা জেলে বন্দি কৃষকদের সঙ্গেও দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশি অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে যাওয়ার পথে জাতীয় সড়কের উপর তাঁকে সমর্থক-সহ গ্রেফতার করে মায়াবতীর পুলিশ। পরে অবশ্য তাঁদের দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, দু'এক দিনের মধ্যেই ফের ভাট্টা-পারসল যেতে চাইবেন দলের অন্য কোনও নেতা বা মন্ত্রী। এবং তিনিও গ্রেফতার হবেন। এমন ঘটনা যত ঘটবে, রাজনৈতিক ভাবে ততই লাভ কংগ্রেসের।

বস্তুত ভাট্টা-পারসলের ঘটনা নিয়ে গত কাল জাতীয় মহিলা কমিশনের কার্যনির্বাহী সভানেত্রী ইয়াসমিন আব্রার সিবিআই তদন্ত দাবি করার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন মায়াবতী। বলেছিলেন, "কমিশন কংগ্রেসের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।" আর আজ মায়াবতীর পুলিশের হাতে সচিন পায়লটের গ্রেফতার। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস এখন এটাই চাইছে। কংগ্রেসকে মায়াবতী যত আক্রমণ করবেন, ততই সিদ্ধ হবে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য। লড়াইটা মায়াবতী বনাম কংগ্রেসে পরিণত হবে। কংগ্রেসের নেতৃত্ব মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশে বাকি দুই বিরোধী দল, বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টি যত প্রাসঙ্গিকতা হারাবে, ততই সুবিধা হবে তাঁদের।

উত্তরপ্রদেশে বিরোধীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে কংগ্রেস যা ভাবছে, তা অবশ্য পুরোপুরি মানছেন না অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বিজেপি ও সপা-কে আপাতত মাঠের বাইরের খেলোয়াড় বলে মনে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তারাও নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। ফলে এই মুহূর্তে শুধু এটুকু বলা যায় যে, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির উত্তাপ বৃদ্ধি শুরু হয়ে গেল। সময়ই বলে দেবে, পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে।

বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে হাজির ডিএমকে

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকল ডিএমকে। টু-জি কেলেঙ্কারিতে ডিএমকে-প্রধান করুণানিধি-কন্যা কানিমোঝি গ্রেফতার হওয়ার পরে তারা বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের অনুষ্ঠানে আসেন লোকসভায় ডিএমকে দলনেতা টি আর বালু। যদিও কাল মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি এসে করুণানিধি সনিয়া গাঁধী বা মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করবেন না বলেই ডিএমকে সূত্রে খবর।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠানে ডিএমকে-র টি আর বালু। — এ এফ পি

কানিমোঝির গ্রেফতারের পরে কংগ্রেসের সঙ্গে ডিএমকে-র সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। আজ চেন্নাইয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন করুণানিধি। সেই বৈঠকে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার পর সন্ধ্যার বিমানে দিল্লি আসেন বালু। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কংগ্রেস-ডিএমকে সম্পর্ক অটুট রয়েছে এবং থাকবে।" একই কথা বলেন কংগ্রেস মুখপাত্রেরাও।

পরে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, "তামিলনাড়ু ভোটে ডিএমকে যে ভাবে ধরাশায়ী হয়েছে, তার পর কেন্দ্রে ইউপিএ থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। করুণানিধি ইউপিএ-র এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত দিল্লি আসেন না। তা ছাড়া মেয়ে যখন জেলে বন্দি, তখন অনুষ্ঠান পালনের মানসিক অবস্থাও তাঁর নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জোটে আঁচ পড়ছে।"

তিহার জেলে বা পাটিয়ালা হাউস কোর্টে মেয়ে কানিমোঝির সঙ্গে দেখা করতে কাল দিল্লি আসছেন করুণানিধি। তবে সনিয়া বা মনমোহনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা কম বলেই ডিএমকে-র তরফে জানানো হয়েছে।

আজকের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে জোটের দুই সমর্থক দল সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কংগ্রেস। সমাজবাদী পার্টি তাদের প্রতিনিধি পাঠালেও গরহাজির ছিল বসপা। ভাট্টা পারসলের কৃষক আন্দোলন নিয়ে মায়াবতীর সঙ্গে কংগ্রেস তথা খোদ রাহুল গাঁধীর সংঘাত যে জায়াগায় গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে তাদের উপস্থিতির প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের ছিল না।

লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন ও গাড়ির সংঘর্ষে মৃত ২০

নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা

প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে একটি বোলেরো গাড়ি এবং দিল্লি-জয়নগর গরিবরথ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৮ জন মহিলা এবং ৯ জন শিশু। বোলেরোর চালক-সহ পাঁচজন গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন। আজ দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বিহারে মধুবনি জেলার মঙ্গেরপট্টি এলাকায় রাজনগর রেলস্টেশনের কাছে ১৭ নম্বর গুমটিতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয় নেতা রাজকুমার যাদবের সমর্থকেরা ছিলেন দুর্ঘটনায় পড়া বোলেরো গাড়িটিতে। মুখিয়া নির্বাচনে রাজকুমার যাদব জেতার পরে সমর্থকেরা বোলেরো গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন বিজয় মিছিলে যোগ দিতে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, আনন্দের আতিশয্যে চালক মদ্যপ অবস্থাতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার ফলেই লেভেল ক্রসিংয়ে উল্টো দিক থেকে আসা ২১৫৭০ ডাউন দিল্লি-জয়নগর গরিবরথ দেখতেই পাননি চালক। রেললাইনে বোলেরো গাড়িটি ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই লাইন ধরে আসা গরিবরথ এক্সপ্রেস সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটিকে। ঘটনাস্থলেই ১৩ জনের মৃত্যু হয়। পরে রাজনগর হাসপাতালে আরও দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। চালক সরোজ-সহ পাঁচ জন গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব অনুপ মুখোপাধ্যায়কে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। দুর্ঘটানায় মৃতদের ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকা ও আহতদের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দানের কথাও ঘোষণা করেন নীতীশ। রেলের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দান এবং ওই লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী মোতায়েনের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নীরজ অম্বষ্ঠা জানান, দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা রেলপথ অবরোধ করেন। ফলে সমস্তিপুর ডিভিশনের ওই শাখায় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ওই ডিভিশনের রেল আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। নীরজ বলেন, "স্থানীয় জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। এর ফলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।"

রাজ্য স্তরে উদ্ভাবনী পরিষদ গড়তে চান স্যাম পিত্রোদা

সংবাদসংস্থা •বডোদরা

জাতীয় স্তরের ধাঁচে রাজ্যগুলিতেও উদ্ভাবনী পরিষদ গড়া হোক, চান স্যাম পিত্রোদা। জাতীয় উদ্ভাবনী পরিষদের চেয়ারম্যান স্যাম আজ জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সব মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন তিনি।

সংবাদসংস্থা পিটিআইকে স্যাম জানান, ভারত জুড়ে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির জন্য দু'হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এই অবস্থায় উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ হওয়া খুবই প্রয়োজন। পিত্রোদার বক্তব্য,

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও উদ্ভাবনী পরিষদের বিভিন্ন বিভাগ গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পিত্রোদা বলেন, "আমরা এখন একুশ শতকের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অথচ আমাদের মানসিকতা সেই উনিশ শতকের। তাই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শক্তি, প্রশাসন, পরিকাঠামোর মতো বিষয়গুলিতে উদ্ভাবনের উপর জোর দেওয়া খুব জরুরি।"

একই সঙ্গে স্যাম পিত্রোদা জানিয়েছেন, উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশের জন্য জাতীয় উদ্ভাবনী পরিষদ একশো কোটি ডলারের একটি তহবিল গড়ে তুলতে চায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবনী কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পিত্রোদা আরও বলেন, "গত চার বছর ধরে ন্যাশনাল লাইব্রেরি কমিশন গড়ে তোলার প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পড়ে রয়েছে। দেশের প্রায় ৫৪ হাজার গ্রন্থাগার থাকলেও কোনও কাজে লাগে না। ফলে পুরো লাইব্রেরিস ইনফরমেশন সার্ভিস (এলআইএস)-কে এক ছাতার তলায় আনাটা দরকার।

বিহু পালন শিলচরেও

নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর

নেকটা অকালবোধনের মতো। কাল থেকে শিলচরে শুরু হয়েছে দু'দিনের বিহু উদ্‌যাপন। কাছাড়ের জেলাশাসক হরেন্দ্রকুমার দেবমহন্ত পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পরে দিনভর চলে প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা, নাচ-গান। প্রকাশিত হয়েছে স্মরণিকাও। বিহুগীত-নৃত্যের সঙ্গে পরিবেশিত হয় অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোক-অনুষ্ঠানও। বাঙালি লোকনৃত্য ধামাইলও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংগঠন এই আনন্দোৎসবে সামিল হয়েছিল।

রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় অসমিয়াদের জাতীয় উৎসবটি বৈশাখ জুড়ে উদ্‌যাপিত হয়। শিলচরে প্রতি বছরই হয় সবশেষে। এর প্রধান কারণ, ব্রহ্মপুত্র থেকে আসা সরকারি অফিসাররাই শিলচরে বিহু উদ্‌যাপনের প্রধান উদ্যোক্তা। চৈত্র সংক্রান্তি, পয়লা বৈশাখ-সহ উৎসবের মূল দিনগুলিতে তাঁরা পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে থাকতে বাড়িঘরে চলে যান। কাজে যোগ দেন বেশ ক'দিন পরে। ফলে বৈশাখে তা আর তাঁদের পক্ষে করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

শিলচরে বিহু উদ্‌যাপনের অন্যতম সংগঠক সমীর মেধি জানান, "১৯৬০ সালে শিলচরে প্রথম বিহু উদ্‌যাপিত হয়। তবে সেটি ছিল ভোগালি বিহু। বৈশাখ মাসের বিহু বা রঙালি বিহুর প্রথম আয়োজন ১৯৭৮ সালে।"

এ বারের শিলচরে রঙালি বিহু সম্মিলনের সম্পাদক করুণা ঠাকুরিয়া জানান, "এখানকার বিহুতে ব্রহ্মপুত্রের চেয়ে কম আনন্দ হয় না। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন বলে এ বরং ভিন্ন মাত্রা পায়।"

টুকরো খবর

কর্নাটকে সরকার ফেলতে নারাজ কেন্দ্র
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি

কর্নাটকে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার সুপারিশ খারিজ করলেও রাজ্যপাল হংসরাজ ভরদ্বাজের তোলা বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্র। রাজ্যের ১১ জন 'বিদ্রোহী' বিজেপি বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত বিধানসভার স্পিকার নিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে তা খারিজ হওয়ার পরে বি এস ইয়েদুরাপ্পার সরকার ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেন ভরদ্বাজ। ওই 'বিদ্রোহী' বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করেই গত বছর অনাস্থা ভোটে উতরে গিয়েছিল বিজেপি সরকার। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অবশ্য ওই বিধায়কেরা ইয়েদুরাপ্পার প্রতিই আনুগত্য জানিয়েছেন। কিন্তু সংবিধানের শাসন ভেঙে পড়ছে বলে জানিয়ে বিধানসভা জিইয়ে রেখে সরকার ভাঙার সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনও সরকারকে ফেলে দেওয়ার পরিণতি যে ভাল হবে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সুপারিশ বাতিল না-করলে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছিল বিজেপি। এই অবস্থায় আজ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনীতি সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, "কর্নাটকে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ বাতিল করা হয়েছে। তবে রাজ্যপাল যে বিষয়গুলির কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করতে বলবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আশা করা যায়, রাজ্য বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।"


ডিমা হাসাওয়ে ফের বন্‌ধ জুয়েল গোষ্ঠীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর

তিন দিনের মাথায় ফের ডিমা হাসাও জেলায় বন্‌ধ ডাকল ডিএইচডি-র জুয়েল গোষ্ঠী। এ বার ৪৮ ঘণ্টার জন্য। সংঘর্ষবিরতি মেনে চলা জঙ্গি সংগঠনের প্রচার সম্পাদক বেলে ডিমাসা জানান, ডিএইচডি প্রধান জুয়েল গারলোসা ও সেনাধ্যক্ষ নিরঞ্জন হোজাইকে-র মুক্তির দাবিতে কাল ভোর পাঁচটা থেকে বন্‌ধ শুরু। চলবে বুধবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। বেলের কথায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জুয়োল বাহিনী শুধু সংঘর্ষবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, অস্ত্র সমর্পণও করেছে। কিন্তু শান্তি আলোচনা শুরুর কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ আলফার সঙ্গে আলোচনার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েই উঠেপড়ে লেগেছে। এর পরই তাঁর হুঁশিয়ারি, দু' বছর থেকে বন্দি জুয়েল গারলোসা ও নিরঞ্জন হোজাইকে-কে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না-হলে পরবর্তী পর্যায়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ৩ দিন আগে তাঁরা জেলাশাসকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে স্মারকপত্র পাঠিয়ে জেলবন্দি নেতাদের মুক্তি দিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু করতে অনুরোধ করেছেন।


রবি-স্মৃতিতে ফলক বসল কটন কলেজে
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য বাড়িতে স্মারক-ফলক বসাল গুয়াহাটির কটন কলেজের বাংলা বিভাগ কর্তৃপক্ষ। ১৯১৯ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর, অসমে এসে তৎকালীন আর্ল ল কলেজের অধ্যক্ষ জ্ঞানদাভিরাম বরুয়ার বাসভবনে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়িটি এখন নলিনীবালা দেবী ছাত্রী নিবাসের অধীক্ষকের বাসভবন। আজ সেখানে রবীন্দ্র স্মৃতিফলকের আবরণ উন্মোচন করেন কমলি ভুঁইঞা। হাজির ছিলেন ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, ইন্দ্রকুমার ভট্টাচায র্ প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেবজিৎ সাহা। সন্ধ্যায় সঙ্গীতানুষ্ঠানে দিলীপ শর্মার স্ত্রী, গায়িকা সুদক্ষিণা শর্মাকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। কটন কলেজ বাংলা বিভাগ ও বঙ্গভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রবীন্দ্র-অসম স্মারক পত্রিকাও প্রকাশিত হয়।


বাবরি ধ্বংসে নতুন মামলা নয় সিবিআইয়ের
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি

লিবারহান কমিশনের রিপোর্টের উপরে নির্ভর করে বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে কোনও নতুন মামলা দায়ের করবে না সিবিআই। "নীতিগত ভাবে" এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন সিবিআই কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীসহ ৬৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে লিবারহান কমিশন। কিন্তু সিবিআইয়ের মতে, রিপোর্টে এমন কোনও তথ্য নেই যার ভিত্তিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করা যায়। তবে রিপোর্টে উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি বিষয় ফের খতিয়ে দেখা হবে।


আজ বন্‌ধের ডাক ত্রিপুরায়
সংবাদসংস্থা • আগরতলা

ত্রিপুরায় বন্‌ধ পালনের আবেদন জানিয়ে রবিবার আগরতলায় মিছিল। উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

যুব নেতাকে প্রহারের প্রতিবাদে আগামী কাল ১২ ঘণ্টার ত্রিপুরা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফ ইণ্ডিয়া বা এনএসইউআই। কংগ্রেসের এই ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, শুক্রবার মহারাজা বীর বিক্রম কলেজে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই জোর করে চাঁদা আদায় করছিল। তার প্রতিবাদ করায় এনএসইউআইয়ের রাজ্য সভাপতি ভিকি প্রসাদ সহ চার কর্মী প্রহৃত হন। ভিকির আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। এসএফআই এই অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেছে, এই ঘটনায় তাঁদের তিন সমর্থক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।


এমএমএস কাণ্ডে ধৃত জেএনইউ ছাত্র
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএমএস কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জনার্দন কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ বছরের ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি মেয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় থাকার সময়ে সে ভিডিও ছবি তোলে। পরে দু'জনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেই ছবি বন্ধু ও পরিচিতদের পাঠায়। বলবীর নামে এক বন্ধু জনার্দনকে ওই ভিডিও টেপ তৈরি ও তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এই কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জামের খোঁজ করছে পুলিশ।

স্থানীয় প্রশ্নেই 'পরিবর্তনে'র হাওয়া রুখেছে ৬২ বাম 'দ্বীপ'

সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা

কিছুটা সংগঠন এবং বাকিটা স্থানীয় 'ফ্যাক্টর'— রাজ্যের ৬২টি কেন্দ্রে 'পরিবর্তনে'র হাওয়া কাটানোর রহস্য এটাই! বামফ্রন্টের প্রাথমিক বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।

রাজ্য জুড়ে 'পরিবর্তনে'র ডাকে মানুষ সাড়া দিয়েছেন এবং তাঁদের পাল্টা আবেদন শোনেননি, ভোটের ফল বেরনোর পরেই মেনে নিয়েছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। কিন্তু 'পরিবর্তনে'র সেই আহ্বান 'অতিক্রম' করেই ৬২ জন বাম প্রার্থী জিতে এসেছেন। ভোটের ফলেই বোঝা যাচ্ছে, 'বাম দুর্গ' বলে কিছু আর এ বার অবশিষ্ট নেই! বিভিন্ন জেলায় ৬২টি কেন্দ্র ছড়িয়ে রয়েছে দ্বীপের মতো! বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের ময়নাতদন্ত আপাতত জারি থাকবে বিভিন্ন স্তরে। কিন্তু জয়ের কারণ হিসাবে ফ্রন্ট প্রার্থী এবং নেতাদের আলোচনায় যা উঠে আসছে, তার নির্যাস: সর্বত্র অভিন্ন কোনও কারণে বাম প্রার্থীরা জেতেননি। কোথাও জিতেছেন স্রেফ ভোট ভাগাভাগির পাটিগণিতে, কোথাও সংগঠনের জোরে, আবার কোথাও প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনসংযোগের জেরে। ক্যানিং পূর্ব থেকে বিজয়ী, প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী এবং সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার কথায়, "গরিব মানুষের ভোট আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তার মধ্যেও গরিব মানুষের বিশ্বাস যাঁরা কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পেরেছেন, তাঁরা জিতেছেন।" বাম জমানার মন্ত্রীদের মধ্যে আর এক বিজয়ী বিধায়ক, আরএসপি-র সুভাষ নস্করের মতে, "কেন্দ্র ধরে ধরে হিসাব নিলেই দেখা যাবে, বামফ্রন্টের জয় হয়েছে স্থানীয় ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে।"


রেজ্জাক মোল্লা

সূর্যকান্ত মিশ্র

সুশান্ত ঘোষ

উদয়ন গুহ

বামফ্রন্টের জেতা ৬২টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৪০টি। বাকি শরিকদের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লক ১১টি, আরএসপি ৭টি, সিপিআই দু'টি এবং ডিএসপি এবং সোশ্যালিস্ট পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। জেলাওয়াড়ি হিসাব নিলে দার্জিলিং, কলকাতা, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরে বামফ্রন্টের কোনও আসনই নেই! কোচবিহারে ৪টি, জলপাইগুড়িতে ৫টি, উত্তর দিনাজপুরে ৩টি, দক্ষিণ দিনাজপুরে একটি, মালদহে ৩টি, মুর্শিদাবাদে ৭টি, নদিয়ায় ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪টি করে, হুগলিতে দু'টি, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯টি করে, পুরুলিয়ায় দু'টি, বাঁকুড়া ও বীরভূমে ৩টি করে— এই ভাবেই ছড়িয়ে আছে বামফ্রন্টের ৬২টি আসন। জয়ী ৬২ জন বিধায়কের মধ্যে ৩২ জন গত বারের বিধানসভায় ছিলেন না।

উত্তরবঙ্গ থেকে ধরলে কোচবিহারে ভাল ফল করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। জেলায় জেতা ৪টি আসনই তাদের। তার মধ্যে দিনহাটা ছিল 'সম্মানের লড়াই'। ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী, ফ ব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা প্রয়াত নেতা কমল গুহের পুত্র উদয়ন গুহের কথায়, "দিনহাটায় পরিবর্তনটা আগে হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয় মানুষের এ বার মোহভঙ্গ হয়েছে!" প্রসঙ্গত, গত বার উত্তরবঙ্গে একমাত্র দিনহাটা আসনটাই জিতেছিল তৃণমূল। উদয়নবাবুর মতে, "মানুষের মনে জায়গা করতে না-পারলে এ বার জেতা সম্ভব ছিল না। গত বার বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকেই আমি লেগে ছিলাম এই নিয়ে। কেন সে বার হারলাম, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। এ বার ভোটের ৬ মাস আগে থেকে এলাকায় যত হেঁটেছি, সারা জীবনেও তত হাঁটিনি! মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছনোর কথা শুধু মুখে বলা নয়, আমি সেটা কাজেও যথাসম্ভব করার চেষ্টা করেছি।" গত বার ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের গোঁজ প্রার্থী, সিপিএমের অসহযোগিতা— এই রকম যে সব বিষয় কাজ করেছিল, এ বার তা না-করাও উদয়নবাবুর জয়ের বড় কারণ। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ কেন্দ্র থেকেই প্রাক্তন মন্ত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধানে (৩২ হাজার ৬৩২) ভোটে জিতেছেন ফ ব-র পরেশ অধিকারী। নির্বাচনী প্রচারে পরেশবাবু একটাও জনসভা করেননি! তাঁর কথায়, "মন্ত্রী থাকার সময়েও এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। যে কোনও সমস্যায় তাঁরা আমার কাছে এসেছেন, সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ভোটের সময় মাইক নিয়ে কোনও সভাই করিনি! প্রতিটি বুথ এলাকায় ছোট ছোট পাড়া বৈঠক করেছি। এ সবেরই ফল মিলেছে।"

দক্ষিণবঙ্গে নেমে এলে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জিততে পেরেছেন বিদায়ী বামফ্রন্ট সরকারের দুই মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রেজ্জাকের কথায়, "পার্টির ঘাড়ে পা তুলে দিয়ে পাঁচ বছরে এক বার জেতার দিন এ বার শেষ হয়েছে! বারো মাস যাঁরা মানুষের সঙ্গে থেকেছেন এবং সংগঠন রেখেছেন, তাঁরাই বাঁচতে পেরেছেন!" কিন্তু সংগঠন দিয়ে মানুষের মন পাওয়া সম্ভব? রেজ্জাকের ব্যাখ্যা, "সংগঠন থাকলে কিছুটা কাজ হয়। যেমন, আমার কেন্দ্রে এমনিতে ৪০ হাজার ভোটে জেতার কথা। মানুষের মন যে হেতু বিরূপ, তাই সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সংগঠনটা পোক্ত ছিল বলে ২১ হাজার ভোটে জিততে পেরেছি।" আরএসপি-র জেলা সম্পাদক সুভাষবাবুর মতও তা-ই। তাঁর বক্তব্য, "মানুষ হয়তো মনে করেছেন, তাঁদের কাছাকাছি আমি থাকতে পেরেছি। তাই পরিবর্তনের ঝড় থাকা সত্ত্বেও আমাকে জিতিয়েছেন।" তবে তাঁর জয়কে বামফ্রন্টের 'সাফল্য' বলে মানতে রাজি নন সুভাষবাবু। প্রাক্তন সেচমন্ত্রীর কথায়, "লোকসভা ভোটে বাসন্তীতে লিড ছিল ১৮ হাজারের বেশি ভোটের। এ বার জয় হয়েছে ৬ হাজার ভোটে। সেই দিক থেকে সাফল্য বলা যাবে কী করে?"

রেজ্জাক, সুভাষবাবু বা অন্য জয়ী প্রার্থীরা জনতার সঙ্গে যে নিবিড় যোগাযোগের কথা বলছেন, তা বরাবরই বজায় রাখতেন আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু হেরে গিয়েছেন। রেজ্জাক, সুভাষবাবুদের মতে, সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে কান্তিবাবুর রায়দিঘি কেন্দ্রে এসইউসি-র বেশ কিছু 'শক্ত ঘাঁটি' পড়েছিল। কান্তিবাবু যে হেতু ওই এলাকাগুলিতে এসইউসি-র 'পয়লা নম্বর দুশমন' বলে পরিচিত, তাই তাঁকে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। আবার উত্তর ২৪ পরগনার ৪টি আসনই ভোট কাটাকুটির জেরে তাঁদের ঝুলিতে এসেছে বলে বাম নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন। সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জে বিজেপি ভোট কেটে বামেদের সুবিধা করে দিয়েছে, বসিরহাটের দু'টি আসনই ঘরে এসেছে 'গোঁজ' প্রার্থীদের 'সৌজন্যে'!

উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের সংযোগস্থলে মুর্শিদাবাদ জেলায় ৭টি আসন জিতেছেন বামেরা, যা এই 'পরিবর্তনে'র বাজারে যথেষ্ট ভাল বলেই ধরা হচ্ছে। ওই জেলার ডোমকল থেকে জয়ী প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান বলছেন, "মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ আমাদের হার এবং জিত, দু'টোই আগে দেখেছেন। তাই পরিবর্তনের হাওয়া এখানে তত প্রবল ছিল না।" বেশ কিছু আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের 'মসৃণ' জোট না-হওয়া বামফ্রন্টের সুবিধা করে দিয়েছে বলে মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম নেতৃত্বের মত। যেমন, জলঙ্গি আসনটিতে এ বারের ৬২ জন জয়ী বিধায়কের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে (৩৭ হাজার ৮৬১) জিতেছেন আব্দুর রজ্জাক। অধীর চৌধুরীর প্রার্থী দাঁড়িয়েছিলেন বলেই জলঙ্গিতে জয়ের ব্যবধান বেশি হয়েছে বলে সিপিএম নেতারা মনে করছেন। গত লোকসভা ভোটে অবশ্য জলঙ্গিতে সিপিএম-ই এগিয়ে ছিল। সংগঠনের ভাল অবস্থাই সেখানে 'ঘাঁটি' রক্ষা করতে সহায়ক হয়েছে।

রাঢ়বঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে দুই প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র ও সুশান্ত ঘোষ জিততে পেরেছেন সংগঠনের জোরে, যদিও দু'জনেরই ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ক'টি আসন জেতা গিয়েছে, সবই সংগঠনের জন্যই সম্ভব হয়েছে বলে সিপিএম নেতৃত্বের মত। পুরুলিয়ার জয়পুর থেকে জয়ী ফ ব-র নতুন বিধায়ক ধীরেন মাহাতোমেনেই নিচ্ছেন, "এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছেন। এটাই জয়ের সব চেয়ে বড় কারণ!"

'দুর্দিনে'র বাজারে জিতেও তাই স্বস্তিতে নেই বাম বিধায়কেরা!

মন্ত্রী মানসকেই আপাতত সভাপতি রাখছে কংগ্রেস

সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা

ন্ত্রী হয়ে গেলেও আপাতত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকছেন মানস ভুঁইয়াই। পশ্চিমবঙ্গে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ রবিবার স্পষ্টই বলেছেন, "মানসই এখন সভাপতি থাকবেন।"

সাধারণ ভাবে কংগ্রেসে 'এক ব্যক্তি, এক পদ' নীতি চালু আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন মানসবাবু। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের সংগঠনের প্রয়োজনেই মানসবাবুকে এখন সভাপতির পদে বহাল রাখতে চান দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। এ বার ভোটে ৬৭টি আসনে লড়াই করে কংগ্রেস ৪২টিতে জয়ী হয়েছে। দলের এই সাফল্যের জন্য মানসবাবুর 'কৃতিত্ব' রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। শাকিলও এ দিন বলেন, "সবে ভোট মিটেছে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে আপাতত মানসই সভাপতির কাজ করবেন। পরে এই ব্যাপারে আমরা চিন্তাভাবনা করব।"

মহাকরণে নিজের ঘরে। —নিজস্ব চিত্র

বস্তুত, সভাপতি বদলের চেয়েও দলের আরও পাঁচ মন্ত্রীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করাই এখন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছে 'গুরুত্বপূর্ণ' বিষয়। শাকিল জানান, তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ, সোমবার বা কাল, মঙ্গলবারের মধ্যে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হবে। তালিকা চূড়ান্ত করেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তা পাঠিয়ে দেবেন। ইউপিএ-২ সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে নৈশভোজ নিয়ে দিল্লিতে এ দিন কংগ্রেস নেতৃত্ব ব্যস্ত ছিলেন। শাকিলের কথায়, "এ দিনের অনুষ্ঠান পর্ব মিটলেই আমরা সনিয়াজি'র সঙ্গে আলোচনায় বসব। সোম-মঙ্গলবারের মধ্যেই ৫ মন্ত্রীর তালিকা চূড়ান্ত করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রীরা শপথ নিয়ে কাজও শুরু করবেন।"

কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রতিমন্ত্রীদের যে প্রাথমিক তালিকা দিল্লিতে শাকিল নিয়ে গিয়েছেন, সেখানে দেবপ্রসাদ রায়, অজয় দে, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, অসিত মাল, আবু নাসের খান চৌধুরী, শাবিনা ইয়াসমিন ও নেপাল মাহাতোর নাম আছে। এঁদের মধ্যে থেকেই পাঁচ জনকে বেছে নিয়ে মন্ত্রীর তালিকা চূড়ান্ত হবে। তবে প্রাথমিক তালিকায় নাম রয়েছে, এমন দু-এক জন নেতা ইতিমধ্যেই প্রতিমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে 'অনিচ্ছুক' বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে শাকিল ও প্রণববাবু এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, "তালিকা চূড়ান্ত করতে কোনও সমস্যা হবে না।"

সভাপতি পদে রদবদল এখনই হচ্ছে না বলে মানসবাবুর কাছেও 'সবুজ সঙ্কেত' এসেছে। নির্বাচনের পরে রাজ্যে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি স্থির করতে আজ, সোমবার থেকেই মানসবাবু দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছেন। মানসবাবু আজ বিকালে তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলের সমস্ত শাখা সংগঠনের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করবেন। কাল, মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে তাঁর বৈঠক করার কথা সব জেলা সভাপতিকে নিয়ে। মানসবাবু এ দিন বলেন, "কংগ্রেস সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যে জেলায় জেলায় প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতিদের যেতে বলব। জেলা কংগ্রেস সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের জনস্বার্থে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নিতে বলব।" প্রদেশ সাধারণ সম্পাদকদের 'কাজের দায়িত্ব'ও তিনি নির্দিষ্ট করে দেবেন বলে মানসবাবু জানান।

মহাকরণ থেকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী 'ছুটি' দেওয়ায় মানসবাবু বিধান ভবনে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গেই অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা ফুল-মিষ্টি নিয়ে মানসবাবুকে 'অভিনন্দন' জানাতে আসেন। এমনকী, বালিতে খুন হওয়া চিকিৎসক সুশীল পালের স্ত্রী কনিকা পাল আসেন মানসবাবুকে অভিনন্দন জানাতে। কংগ্রেস কর্মীরা মানসবাবুর কাছে জেলা-সফরে যাওয়ার আর্জি জানান। মানসবাবু জানান, রাজ্যের মানুষ কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করেছে। তাদের 'ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা' জানাতে তিনি জুন মাসের গোড়া থেকেই জেলা-সফর শুরু করবেন।

সিপিএম এবং বিজেপি-র লাগাতার প্রচার সত্ত্বেও মনমোহন সিংহের সরকার যে 'আইনের অনুশাসন' মেনে সমস্ত রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেই বিষয়টি যেমন মানসবাবু রাজ্য সফরে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন, তেমনই রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসনে 'কালোবাজারী বা মজুতদার'দের বিরুদ্ধে যে কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা-ও প্রচার করবেন। রাজ্যে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে জনমানসে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের 'কৃতিত্ব'কে তুলে ধরতে চান মানসবাবুরা।

তাঁর কথায়, "রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনে মানুষই তো মূল শক্তি!" পাশাপাশি, সেচমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের সেচ ব্যবস্থাও ঘুরে দেখবেন প্রদেশ সভাপতি। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা আছে এবং আরও কী করণীয়, তার একটা প্রাথমিক রিপোর্ট মানসবাবু তৈরি করছেন।

আগামী বুধবার দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনে 'গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে'র গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে মানসবাবুর আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা।

এসপি-দের ডিজি-র বার্তা

জেলায় দ্রুত নাগরিক কমিটি গড়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

কিশোর সাহা • কলকাতা

গে যা হওয়ার হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের সব জেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট বাসিন্দাদের নিয়ে পরামর্শদাতা কমিটি গড়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কমিটি পুলিশকে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করবে। রবিবার মহাকরণে এই কমিটি গড়ার কথা জানান রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়।

ডিজি বলেন, "কমিটির কাজ হবে বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশকে পরামর্শ দেওয়া।" ওই কমিটিতে কারা থাকবেন? ডিজি বলেন, "সমাজের বিভিন্ন পেশার লোক যেমন-- চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবীরা থাকবেন। থাকবেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও।" জেলার প্রতিটি থানার প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে কমিটিতে। তবে কমিটি কত সদস্যের হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিটি গড়ার কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলেও দ্রুততার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ কার্যকর করতে পুলিশ সুপারদের বলা হয়েছে বলে ডিজি জানান।

নাগরিকদের নিয়ে জেলায় জেলায় এ ধরনের কমিটি গড়ার প্রচেষ্টা কিন্তু এ রাজ্যে নতুন নয়। আগেও প্রয়াত জ্যোতি বসু এবং পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এ ধরনের কমিটি গড়ার চেষ্টা হয়। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, বাস্তবে অধিকাংশ জেলায় ধরনের কমিটি গড়া হয়নি। যে সব জায়গায় গঠিত হয়েছিল, সেখানেও একটি বা দু'টি বৈঠকের বেশি এগোতে পারেনি কমিটি। পুলিশের কিছু কর্তা জানান, স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাই ওই ধরনের কমিটিকে কার্যকর করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাননি। পাশাপাশি, পুলিশের একটা বড় অংশের তরফেও কমিটি গঠন ও কার্যকর করার ব্যাপারে বাড়তি তৎপরতা ছিল না। ফলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে। নাগরিক কমিটি আর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারেনি।

বাস্তবে এই কমিটি কী করতে পারে, বা এর প্রশাসনিক গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু?

স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, যে কোনও থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে সব সমস্যা দেখা দেয়, তা সমাধানে এলাকার বিশিষ্টজনদের মত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সমস্যা সমাধানের দিশা পেতে বিভিন্ন পেশা ও ভাষার মানুষদের অভিমত পুলিশের কাজে আসে।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, "স্থানীয় সমস্যা সমাধানে ওই কমিটির মত নাগরিকদের কাছে জানালে অনেক সুবিধে মেলে। কারণ, কমিটিতে সব সম্প্রদায়েরই প্রতিনিধিত্ব থাকে। ফলে, কমিটির মতের প্রেক্ষিতে নেওয়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।" ঘটনা হল, এত দিন যে ক'টি থানায় ওই জাতীয় নাগরিক-কমিটি হয়েছে, তার প্রতিনিধি বাছাইয়ে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের 'সুপারিশ' অনেক ক্ষেত্রেই জেলা পুলিশের কর্তারা মেনে নিয়েছেন।

মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ওই কমিটি গঠন করতে হবে। থানা এলাকার বাসিন্দা সব ভাষার মানুষের অন্তত এক জন করে প্রতিনিধিকে ওই কমিটিতে রাখতে হবে। চিকিৎসক, অধ্যাপক, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী, সংবাদ মাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা যেমন থাকবেন, তেমনই ওই এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বও সুনিশ্চিত করতে হবে কমিটিতে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র দফতর থেকে সে কথা পুলিশ সুপারদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

থাকবেন সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও

মমতার প্রথম পরিষদীয় বৈঠক আজ বিধানসভায়

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আজ, সোমবার প্রথম বার দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়।

বিধানসভা ভবনে আজ তৃণমূল পরিষদীয় দলের প্রথম বৈঠক। পরিষদীয় দলের নেত্রী হিসাবে সেই বৈঠকে বিধায়কদের কাজের রূপরেখা ঠিক করে দেবেন মমতা। দীর্ঘ দিনের সংসদীয় রাজনীতিতে অভ্যস্ত মমতাকে এই প্রথম দেখা যাবে বিধানসভায় পরিষদীয় দায়িত্ব পালনে। পরিষদীয় দলের ওই বৈঠকে তৃণমূলের সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় রবিবার বলেন, "তৃণমূলের সদ্যনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে আজ, সোমবার বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দলের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও সেখানে থাকবেন।" বাম জমানায় বিধানসভার দলনেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের আগে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করতেন বামফ্রন্টের বিধায়কদের নিয়ে। মমতা এখন তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোট সরকারে মুখ্যমন্ত্রী। সেই হিসাবে জোটের সব বিধায়ককে নিয়ে তাঁরও বৈঠক করার কথা। শোভনবাবু বলেন, "আগে তৃণমূলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক হয়ে যাক। পরে কখনও জোটের বিধায়কদের নিয়ে বসার কথা ভাবা হবে।"

তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকের আগে আজ থেকেই বিধানসভায় নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথ গ্রহণ পর্ব শুরু হবে। প্রথমে রাজ্যের মন্ত্রীরা (মমতা বাদে) বিধায়ক হিসাবে শপথ নেবেন আজ সকালে। শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রোটেম স্পিকার, কংগ্রেসের প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। তার পরে উত্তরবঙ্গের ৬টি-সহ মোট ৮ জেলার বিধায়কেরা শপথ নেবেন। কাল, মঙ্গলবার বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলির বিধায়কদের শপথ নেওয়ার কথা। বুধবার শপথ হওয়ার কথা দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলির বিধায়কদের। শপথ গ্রহণ পর্বের পরেই আজ পরিষদীয় দলকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, বিধানসভার স্পিকার হিসাবে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেপুটি স্পিকার হিসাবে সোনালি গুহের নাম প্রস্তাব করেছেন মমতা। প্রথাগত ভাবে সব বিধায়কদের শপথ নেওয়া হয়ে গেলে তাঁরা স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবেন।

তৃণমূলের ১৮৪ জন বিধায়কের মধ্যে ১৫২ জনই গত বার বিধানসভায় ছিলেন না। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অতীতে বিধায়ক থাকলেও সিংহভাগই প্রথম বারের বিধায়ক। বিধানসভার আদব-কায়দার সঙ্গে তাঁদের রপ্ত করাতে সাহায্য করাই তৃণমূল পরিষদীয় নেতৃত্বের মুখ্য উদ্দেশ্য। তারই পাশাপাশি, তৃণমূলকে 'অভ্যস্ত' হতে হবে বিধানসভায় শাসক বেঞ্চে বসার ভূমিকার সঙ্গে। সেই জন্যই সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পরিষদীয় বৈঠকে রাখা হচ্ছে। যাতে তাঁরা সংসদীয় রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গেই শাসক পক্ষে থাকার অভিজ্ঞতাও বিধায়কদের কাছে ব্যক্ত করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইতিমধ্যেই মমতা কয়েকটি নীতিগত ঘোষণা করে দিয়েছেন মহাকরণ থেকে। সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিলের রূপরেখা সরকারকে তৈরি করতে হবে। নিতে হবে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের প্রস্তুতিও। সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের জন্য 'রূপরেখা' বেঁধে দিতে পারেন বলে তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের ইঙ্গিত।

টুকরো খবর

সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানের ইস্তফায 
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সৈয়দ এস জেড আদনান। 'ব্যক্তিগত কারণে' সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন আদনান। তবে যে সব কমিশন এবং নিগমের চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁদের সকলেরই পদত্যাগের কারণ সরকার পরিবর্তন। যে সরকার তাঁদের নিয়োগ করেছিল, তারা নেই বলেই চেয়ারম্যানেরা সরে দাঁড়াচ্ছেন। নতুন সরকার নতুন করে এই সমস্ত পদে নিয়োগ করবে ও প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।


১৫ জুনের মধ্যে বেরোতে পারে জয়েন্টের ফল 
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা রবিবার নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিয়েও কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি। ১৫ জুনের মধ্যে ফল বেরোতে পারে বলে এ দিনই জানিয়েছেন জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ দত্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারেই জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধার্থবাবু জানান, ১৫ জুনের মধ্যে ফল বার করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে পরবর্তী কালে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হতে পারে। এ বছর মেডিক্যালে আসন বাড়তে পারে বলেও খবর। এমন সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিয়ে সিদ্ধার্থবাবু বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত খবর মিলতে পারে কাউন্সেলিংয়ের আগে। এ বছর রাজ্যে ৩১১টি কেন্দ্রে প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার জন পরীক্ষা দিয়েছেন


আজ িসবিএসই দ্বাদশের ফল
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

পটনা ছাড়া সারা দেশে সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির ফল আজ, সোমবার প্রকাশিত হবে। বোর্ড সূত্রে রবিবার এ কথা জানা গিয়েছে। পটনায় ফল প্রকাশ হবে ২৭ মে, শুক্রবার। www.results.nic.inwww.cbseresults.nic.in,www.cbse.nic.in ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবেন। এ ছাড়াও দেশের যে-কোনও প্রান্ত থেকে ০১১-২৪৩৫-৭২৭০ নম্বরে ফোন করলেও ফল জানা যাবে বলে বোর্ডের এক আধিকারিক জানান। প্রায় আট লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষা দিয়েছেন। বোর্ড সূত্রের খবর, দশম শ্রেণির ফল শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।

মমতার সৌজন্য-ছবিতে বুদ্ধেরও ঠাঁই মহাকরণে

নিজস্ব সংবাদদাতা

রিবর্তন শুধু রাজ্যে নয়। অথবা নিছক মুখ্যমন্ত্রীর খাস কামরাতেই নয়। সৌজন্যের আবহে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগল মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে মহাকরণের অলিন্দে সাজানো ফোটো গ্যালারিতেও।

এত দিন ওই ফোটো গ্যালারিতে সাধারণ ভাবে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের ফিতে কাটার ছবি অথবা নানান প্রকল্পের উদ্বোধনের ছবি শোভা পেত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পরিবর্তন এ বার ওই গ্যালারিতেও। রবিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে তাঁর নির্দেশে মন্ত্রীদের শুক্রবারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ছবি তো লাগানো হলই, পাশাপাশি গুরুত্বের সঙ্গে টাঙানো হল ওই অনুষ্ঠানেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর মতো নেতাদের সঙ্গে মমতার সৌজন্য বিনিময়ের ছবিও। অনেকের মতে, ভোটে বিপুল জয়ের পর থেকেই মমতা যে-ভাবে 'আমরা-ওরা'র ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক সৌজন্য ফিরিয়ে আনতে চাইছেন, ওই ছবি গুরুত্বের সঙ্গে টাঙানোটা সেই আগ্রহের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সৌজন্যের সেই মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি। — বিশ্বনাথ বণিক

মুখ্যমন্ত্রী চান, যাঁরা নানা কাজে মহাকরণে আসবেন, এই সৌজন্য-ছবি দেখে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তাঁরা আরও স্পষ্ট ধারণা নিয়ে ফিরবেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে গ্যালারির দু'টি ভাগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের শপথগ্রহণের ৪৪টি ছবি এ দিন টাঙানো হয়েছে। তার মধ্যে উপরের দিকে ডান দিক থেকে ন'নম্বরে আছে রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বুদ্ধবাবু, বিমানবাবু এবং তাঁদের পাশে বসা অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে মমতার একটু ঝুঁকে নমস্কার বিনিময়ের ছবি।

শুধু গ্যালারি-সজ্জাতেই নির্দেশ দিয়ে ক্ষান্ত হননি মুখ্যমন্ত্রী। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সেরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকেই মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর ঘরের খোলনলচে বদলে দিতে হবে। বাড়াতে হবে ঘরের উজ্জ্বলতা। ঘরে থাকবে সবুজের সমারোহ। ঘরে থাকবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং অন্যান্য মনীষীর ছবি।

এ দিন দুপুরে দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে মেঝের গালিচা ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে 'ফল্‌স সিলিং'। রাজ্যের পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন জানান, মেঝে হবে কাঠের। ছ'মিটার লম্বা এবং ছ'মিটার চওড়া ওই ঘরের দেওয়ালে নতুন রঙের পালিশ পড়বে। এবং এমন ভাবে সেই পালিশ করা হবে, যাতে ঘরের আলো আরও স্পষ্ট, আরও উজ্জ্বল হয়। হাল্কা একটা মাধুর্য যেন ঘরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের ভিতরে ছোট ছোট টবে থাকবে নানা ধরনের সবুজ গাছ এবং লতা-গুল্ম। ওই ঘরে আগেকার টেবিলটিই যথারীতি থাকবে। থেকে যাবে আটটি চেয়ারও। তবে গদি-আঁটা চেয়ারের বদলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার-সহ আটটিই হবে কাঠের চেয়ার।

পূর্তসচিব বলেন, "ঘরের দেওয়ালে এবং টেবিলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং অন্যান্য মনীষীর যে-সব ছবি রাখা হবে, মুখ্যমন্ত্রীই সেগুলি নিয়ে আসবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তা দ্রুত টাঙানো এবং সাজানোর ব্যবস্থা করব।"

সাজসজ্জা পরিবর্তনের এই কাজে নামানো হয়েছে জনা তিরিশ কর্মীকে। রাতভর চলছে সেই কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘর নতুন করে সাজানোর জন্য পূর্ত দফতরকে সাহায্য করছেন মমতার ব্যক্তিগত সহকারী রতন মুখোপাধ্যায়। পূর্তসচিবকে নিয়ে রবিবার সকাল থেকে দিনভর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর কনফারেন্স রুমে বসে কাজের তদারক করেন তিনি। পূর্তসচিব বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।"

মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতে খুলছে জোকা মেট্রোর জট

নিজস্ব সংবাদদাতা

মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৭২ ঘণ্টা না-কাটতেই জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের জট কাটিয়ে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে রবিবার তিনি রেল প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় এবং রাজ্যের পরিবহণ ও পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির পরে প্রায় ১০ মাস কেটে গেলেও কাজ সে ভাবে শুরু করা যায়নি। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই মমতা বার বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন।

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ মমতা ওই দুই মন্ত্রীকে কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠান। পরে সুব্রতবাবু বলেন, "আমাকে দেওয়া দু'টি দফতরের নির্দিষ্ট কিছু তথ্য উনি চেয়েছেন। কাল বিধানসভায় শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে আমরা ব্যস্ত থাকব। মঙ্গলবারের মধ্যে সব তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে দেব।" মুকুলবাবু বলেন, "ডায়মণ্ড হারবার রোডের মেট্রো প্রকল্প নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। মুখ্যমন্ত্রী সেগুলি অবিলম্বে মেটাতে নির্দেশ দিয়েছেন।"

জোকা থেকে বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পটি রূপায়িত করার কথা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের। তারা রেলের পরামর্শদান সংস্থা 'রাইট্‌স'-কে এর বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেয়। গত জুলাই মাসে 'রাইট্‌স' এই রিপোর্ট পেশ করে। ট্রামলাইনে কাজ শুরুর মুখে আপত্তি জানায় রাজ্য সরকার। ফলে কাজ আটকে যায়। এর পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বণিকসভায় কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার প্রকাশ্য অভিযোগ করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা পদযাত্রা করেন ডায়মণ্ড হারবার রোডে।

২৬১৯ কোটি টাকার এই রেল-প্রকল্পে দুই প্রান্তের ব্যবধান ১৬.৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১টি স্টেশন হওয়ার কথা। এগুলি হল ঠাকুরপুকুর, শখেরবাজার, বেহালা চৌরাস্তা, বেহালা বাজার, তারাতলা, মাঝেরহাট, মোমিনপুর, খিদিরপুর, হেস্টিংস, পার্ক ষ্ট্রিট ও এসপ্ল্যানেড। প্রান্তিক স্টেশন করতে জোকায় ১.১৬ কিমি জায়গাও চিহ্নিত করেছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প রূপায়ণে ট্রাম-কর্তৃপক্ষের বাধা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, "এটি রাজ্য সরকারের অধীন। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত।"

কেবল মেট্রো প্রকল্পই নয়, পরিবহণ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতার সঙ্গে কালীঘাটের বাড়িতে দেখা করতে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। ওই সময়েও মমতা নির্দেশ দেন, যান-চলাচল অব্যাহত রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ দিকে, ডায়মণ্ড হারবার রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফুটপাথ ও রাস্তায় ছড়িয়ে বসা হকারদের উচ্ছেদ না-করলেও ওঁদের জায়গা কমিয়ে দেওয়া হবে। রিকশা, অটো ও বাস যত্রতত্র দাঁড় না-করানোর নির্দেশের পাশাপাশি যান-ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ ও প্রশাসনের অফিসারেরা বেহালা থানায় এ ব্যাপারে একটি বৈঠকে বসেন।

এখন বেহালায় ফুটপাথে হকাররা বসেন প্রায় ১০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে: হকারদের জন্য ফুটপাথে ৪ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট চওড়া জায়গা নির্দিষ্ট করা হবে। দোকানের বাইরে জিনিস রেখে ব্যবসা করা যাবে না। ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, "তারাতলার পর থেকে জবরদখলের জন্য যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। সকাল ৯টার পরে ওই রাস্তায় পণ্যবাহী লরি চালাতে দেওয়া হবে না। পুরসভার কাছে ৩০০ জন 'গ্রিন পুলিশ' চাওয়া হয়েছে। ডায়মণ্ড হারবার রোডের যান-নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের হাতে দেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"

এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আলিপুরের এসডিও তনভির আফজল, ট্র্যাফিক এবং টাউন বিভাগের দুই ডিএসপি, বেহালা ও ঠাকুরপুকুর থানার আইসি, কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান মানিক চট্টোপাধ্যায়, ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ এবং হকার ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা।

পুর-গুরুত্বে সেক্টর ৫, আইআইএম

সঞ্জয় চক্রবর্তী

শুধু কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত করাই নয়, ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের শিল্পমুখ নবদিগন্ত এবং জোকার ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করে দিল কলকাতা পুরসভা।

পুরসভার লক্ষ্য, নবদিগন্ত ও আইআইএম সংলগ্ন এলাকাকে আন্তর্জাতিক বাজারে আকর্ষণীয় করে তোলা। এ নিয়ে আজ, সোমবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা হবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই নবদিগন্ত এবং জোকার দু'টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে শহর কলকাতার অন্তভুর্্‌ক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। কী ভাবে ওই দুই এলাকার পরিকাঠামোর আমূল সংস্কার করা যায়, সে নিয়ে রবিবারই কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

কী ভাবে? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, নবদিগন্তের পথঘাট, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ও দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ গড়ে তুলতে একগুচ্ছ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। জোর দেওয়া হবে তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের সর্বস্তরের কর্মীদের নিরাপত্তাতেও। যা আন্তর্জাতিক বাজারে নবদিগন্তকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। প্রসঙ্গত, মেয়র জানান, তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের পরিচালন সংস্থা নবদিগন্তকে পুরসভা দৈনিক ১৫ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করছে। ভবিষ্যতে জল সরবরাহের পরিমাণ আরও অনেকটাই বাড়ানো হবে। জল সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে বিধাননগর পুরসভাতেও।

মেয়র জানান, নবদিগন্ত ছাড়াও কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জোকা-১ এবং জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত। আইআইএম ঘিরেও শিল্পতালুক গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। শোভনবাবু বলেন, "নাগরিক পরিষেবা উন্নত করার পাশাপাশি জোকাকেও শিল্প গড়ার আদর্শ স্থান হিসেবে তুলে ধরতে চাইছি।"

মহানগরীর যাবতীয় নাগরিক পরিষেবা একটি ছাতার তলায় (কলকাতা পুরসভার অধীনে) আনার পরিকল্পনার কথা নির্বাচনী প্রচারেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়র এ দিন বলেন, "বামফ্রন্টের আমলে কলকাতায় নাগরিক পরিষেবার দায়িত্ব বিচ্ছিন্ন ভাবে কোথাও কেএমডিএ, কোনও এলাকায় পূর্ত দফতর, কোথাও পুরসভা, আবার কোনও এলাকায় কেআইটি-র হাতে ছিল। ফলে সামগ্রিক ভাবে নাগরিকদের পরিষেবা সরবরাহের জন্য কোনও সংস্থার দায়বদ্ধতাই নির্দিষ্ট হয়নি। আমরা দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করতে চাই।"

'অভিজাত' চোর-চক্র, চোরাই মোটরবাইক থাকত থানায়

চিরন্তন রায়চৌধুরী

বাঘের ঘরেই ঘোঘের বাসা!

চোরাই মোটরবাইক রাখার জায়গার অভাব। রয়েছে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়। তাই থানার মধ্যেই চোরাই মোটরবাইক রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছিল চোরেরা। চোরাই মাল রাখার 'সুব্যবস্থা' করে বিলাসবহুল শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়ে নতুন শিকার খুঁজতে বার হত তারা। শিকার পেয়ে গেলে সেই মস্ত গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার আড়ালেই মোটরবাইক লোপাটের কাজ নিখুঁত ভাবে সারত।

দিন তিনেক আগে একবালপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া একদল মোটরবাইক চোরকে জেরা করে এমন তথ্য জেনে তাজ্জব কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। পুলিশের হাতে ওই দিন ধরা পড়ে প্রবীর সাহা, বিপ্লব মণ্ডল, সাবির হুসেন, শেখ মুমতাজ রহমান, মলয় সাহা, অনির্বাণ সেনগুপ্ত। জেরায় তারা স্বীকার করে, তাদের চোরাই গাড়ি রাখার জায়গা ছিল হাবরা থানা।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন জানিয়েছিলেন, একটি চোরাই মোটরবাইক এবং ৭ কিলোগ্রাম গাঁজাও মেলে ধৃতদের কাছে। আদালত ধৃতদের পুলিশি হেফাজত দেয়। পুলিশের দাবি, প্রায় ৫০টি মোটরবাইক চুরির কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে দুষ্কৃতীরা। সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার ফুলবাগান, বেলেঘাটা, মানিকতলা থেকে পার্ক ষ্ট্রিট, বড়বাজার, তালতলা এলাকাতেই 'অপারেশন' চালাত এই চক্র। দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল তাদের 'কাজের' সময়। চোরাই গাড়ি বিক্রির টাকায় দামি এসি গাড়ি কিনেছিল মুমতাজ। তার বন্ধু, নারকেলডাঙার প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ীর ছেলে সাবির এবং মানিকতলার 'সেকেণ্ড-হ্যাণ্ড' গাড়ি-ব্যবসায়ী মলয়কে নিয়ে সেই গাড়িতেই চুরি করতে বার হত বছর চব্বিশের

ওই যুবক। মিউজিক সিস্টেম লাগানো, কালো কাচে ঢাকা গাড়ি নিয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরত তিন দুষ্কৃতী। 'অরক্ষিত' মোটরবাইকের গাঁ-ঘেষে গাড়ি রেখে আড়াল করত সেটিকে। মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ হাসিল করে চম্পট দিত।

এক গোয়েন্দা অফিসার জানিয়েছেন, চোরাই মোটরবাইক বাংলাদেশে পাচারের 'দায়িত্ব' ছিল হাবরার বালিপুরের বাসিন্দা প্রবীরের। ওই কাজে তাকে সাহায্য করতেন বনগাঁর বিপ্লব মণ্ডল এবং গাইঘাটার আঙরাইলের এক বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি এখন ফেরার। পুলিশ জানিয়েছে, প্রবীর বারাসত আদালতের মুহুরি। সেই সূত্রে আইনজীবী এবং পুলিশের সঙ্গে পরিচিতি ছিল তার। চোরাই মোটরবাইক নিয়ে মাঝেমধ্যেই ওই সমস্ত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করত সে। সেই কারণে তার চেনাজানা পুলিশকর্মীরা সন্দেহ করতেন না। অনেক পুলিশকর্মীর কাছে নিজেকে উত্তর ২৪ পরগনার এসপি নিযুক্ত সাদা পোশাকের পুলিশের 'সোর্স' বলেও জাহির করত প্রবীর।

ভোটের আগে থেকে রাস্তায়-রাস্তায় জোরদার তল্লাশি শুরু করে যৌথ বাহিনী এবং পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সেই সময়ে চোরাই মোটরবাইকের কয়েকটি হাবরা থানার পিছন দিকে রাখা আটক গাড়ির ভিড়ে লুকিয়ে রেখেছিল প্রবীর। তা টের পাননি ওই থানার কেউ-ই।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দেশে ৬০-৭০ হাজার টাকার মোটরবাইক বাংলাদেশে ভারতীয় মুদ্রায় ১৮-২২ হাজারে বিক্রি করত ওই দুষ্কৃতী-চক্র। তদন্তকারীদের দাবি, পাশাপাশি মাদক পাচারের কাজও করত তারা।
সম্পাদকীয় ১...

সুশাসন, সুশাসক

কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার দুই বৎসর অতিক্রম করিল। তৃতীয় বৎসরের সূচনা হইতেছে একটি প্রশ্নচিহ্নের সহিত। সুশাসন কোথায়? ইহার সহিত আরও একটি প্রশ্ন। সুশাসনের জন্য অপরিহার্য প্রশাসনিক দৃঢ়তাটিই বা কোথায়? একাধিক্রমে সপ্তম বার কেন্দ্রীয় সরকারের বার্ষিক প্রগতি-পত্র দাখিল করিবার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই সব প্রশ্নের কিছু উত্তর খুঁজিয়াছেন, নিশ্চিত, কিন্তু বিগত দুইটি বৎসরে ইউ পি এ সরকারের কার্যক্রম গণমনে কিছু সংশয়ের জন্ম দিয়াছে। মহারাষ্ট্রে আবাসন কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ ক্রীড়া এবং স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির ন্যায় একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় দেশ জুড়িয়া তোলপাড়। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জনতাকে অস্থির করিয়াছে। সেই দ্বৈত সংকটকে আরও দুঃসহ করিয়াছে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রশাসন কাজ করে নাই, এমন নহে, করিয়াছে— কিন্তু, যে রূপে করিয়াছে, তাহা যেন দায়ে পড়িয়া তৎপর হইবার শামিল। ফলে, সরকারের ভাবমূর্তিটি দুই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এক, নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠিয়াছে। দুই, সেই নিষ্ক্রিয়তার অন্তরালে অন্য কোনও হিসাব আছে কি না, তেমন একটি সন্দেহ ক্রমেই দানা বাঁধিয়াছে। নজিরবিহীন ভাবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দফতরের প্রতিও একাধিক তর্জনী উদ্যত। এই আবহে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের ইতিবাচক কার্যক্রমগুলি অনেকাংশেই ম্লান ঠেকিতেছে। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে যে সকল উল্লেখযোগ্য সাফল্য, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উন্নতি, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেও কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ— সবই চাপা পড়িতেছে একটি প্রশ্নচিহ্নের নীচে। সুশাসন কোথায়?

সত্য, যে সকল অব্যবস্থার অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহার সবই যে সম্পূর্ণত সরকারি অদক্ষতার ফল, এমন নহে। এমনও নহে যে, সরকার তৎপর হইলেই মূল্যবৃদ্ধির ন্যায় সমস্যার রাতারাতি সমাধান হইত। পাশাপাশি, ইহাও সত্য যে, সরকার যে এই সব সমস্যার সমাধান করিতে ব্যগ্র, প্রশাসনের তরফে সেই রকম একটি বার্তা প্রেরণ করা উচিত ছিল। তাহা ঘটে নাই। বরং, ক্রমাগত সিদ্ধান্তহীনতার দরুন ইহার উল্টা ইঙ্গিতই গিয়াছে। সরকার ব্যবস্থা নিতে যত গড়িমসি করিয়াছে, তাহার দক্ষতা লইয়া সংশয় ততই বাড়িয়াছে। শেষে যখন তৎপরতা দেখা গিয়াছে, যেমন স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির পরে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন, তাহাকে নিরুপায় হইয়া বিরোধীদের দাবি মানিবার ন্যায় মনে হইয়াছে। প্রশাসন স্বেচ্ছায় এমন নিরুপায় একটি ভাবমূর্তি কেন গ্রহণ করিবে, সেই তর্কটি উঠিতে বাধ্য। উঠিতেছেও।

প্রথম ইউ পি এ সরকারকে কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার ব্যাধি এমন ভাবে গ্রাস করে নাই। বরং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত পরমাণু চুক্তি লইয়া মনমোহন সিংহের সরকার যে দৃঢ় মনোভাব গ্রহণ করিয়াছিল, তাহা স্মরণে আসিতে পারে। সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করিতে গিয়া প্রধানমন্ত্রী জোটসঙ্গীকে বিসর্জন দিতেও পিছপা হন নাই। ইহাই প্রশাসকের মনোভঙ্গি। সুশাসকেরও। সেই দৃঢ়তা জনতারও আস্থা অর্জন করিয়াছিল। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটই তাহার প্রমাণ। অতঃপর, সেই সরকারেরই দ্বিতীয় দফায় বিপুল নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আরও বেশি করিয়া প্রকট হইতেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কবুল করিতেছেন যে, জোটধর্ম পালনের তাগিদ অনেক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইতেছে। ইহাই যদি সংকট হয়, তাহা হইলে স্পষ্ট বলা প্রয়োজন, প্রশাসকের তরফে এমন দুর্বলতা কোনও ভাবেই কাম্য নহে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক প্রধান থাকিতে হইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়কেই এই জাতীয় সংকটের মোকাবিলা করিতে হইবে। রণে ভঙ্গ দিয়া জোটধর্ম পালনের অজুহাত আদপেই বাঞ্ছিত নহে। কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বে মাননীয় মনমোহন সিংহের তৃতীয় বর্ষটি শুরু হইল। অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় অর্ধেক অতিক্রান্ত। প্রশ্ন জমিয়াছে অনেক। উত্তর সন্ধান জরুরি।

সম্পাদকীয় ২...

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ও ঘর

মতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইয়া দিয়াছেন, তিনি কালীঘাটে তাঁহার বাড়িতেই থাকিবেন এবং সেখান হইতেই মহাকরণে যাতায়াত করিবেন। নূতন মুখ্যমন্ত্রী নিজের যে অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার ছবি জনসমক্ষে তুলিয়া ধরিয়াছেন, নিজেকে ভি আই পি না ভাবিয়া সাধারণ মানুষ হিসাবে বিজ্ঞাপিত করার যে ধারাটি সযত্নে লালন করিয়াছেন, মুখ্যমন্ত্রী হইয়াও অতিসাধারণ বাসায় বসবাসের ইচ্ছা তাহার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ইচ্ছা তাঁহার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে, তাহাতে সন্দেহ নাই। একই সঙ্গে, আপন বাড়ির পরিবেশ, চেনা আকাশ, পরিচিত প্রতিবেশী, সব কিছুই আগের মতো আঁকড়াইয়া থাকার বাসনাও খুব অস্বাভাবিক নয়।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে কি আর আগের মতো ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব? তিনি এখন ব্যক্তিমাত্র নহেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। যত দিন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকিবেন, তত দিন তাহাই হইবে তাঁহার প্রধানতম পরিচয়। ব্যক্তি মমতার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সেখানে গৌণ। মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার উপযুক্ত বাড়িতেই বাস করিবেন, ইহাই বাঞ্ছিত। সেখান হইতেই তাঁহাকে কর্মস্থলে যাতায়াত করিতে হইবে, এমনকী তাঁহার আবাসনেও যাহাতে মন্ত্রকের কাজকর্ম সারা যায়, সেই বন্দোবস্তও জরুরি। মহাকরণ পর্যন্ত তাঁহার গমনপথ যাহাতে নির্বিঘ্ন থাকে, তাহা সুনিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের কর্তব্য। সর্বোপরি রহিয়াছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও। ব্যক্তি মমতা, এমনকী রাজনীতিক মমতাও নিরাপত্তা বলয় এড়াইয়া চলিতে পারেন। নিরাপত্তার কড়াকড়িকে আমজনতার সহিত অবাধ মেলামেশার পথের বাধা রূপে গণ্য করিতে পারেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতার সে উপায় নাই। নিজের স্বার্থে নয়, রাজ্যের স্বার্থে, প্রশাসন ও সরকারের স্বার্থে তাঁহাকে অপরিহার্য নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঘোরাফেরা করিতেই হইবে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্যই প্রশাসন তাঁহার উপযুক্ত বাসস্থানের সন্ধান করিয়া থাকেন। মমতার ক্ষেত্রেও তাহার অন্যথা হওয়া উচিত নয়।

এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য একটি নজির টানিতে পারেন। তাঁহার পূর্বসূরির নজির। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁহার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি ছাড়িয়া নিরাপদ ও সুবিধাজনক বিকল্প বাসস্থানে উঠিয়া যাইবার পরামর্শ শুনেন নাই। তিনি পুরানো সরকারি আবাসনেই বাস করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই, তাঁহার ব্যক্তিগত অনাড়ম্বর জীবন নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। কিন্তু তাঁহার নিত্য যাতায়াতের ঝঞ্ঝাট অন্য যানবাহনের পক্ষে নিয়মিত নানা অসুবিধার সৃষ্টি করিয়াছে। নিরাপত্তার কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সন্নিহিত এলাকায় গাড়ি রাখার স্থানও প্রায়শ অকুলান হইয়াছে এবং স্থানীয় মানুষের সে জন্য নানা অসুবিধাও ঘটিয়াছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্থাপিত এই নজির অতএব একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটের বাসভবনে যাতায়াত করিতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট বাসভবনটি সে ক্ষেত্রে তাঁহার 'বাড়ি' হইতে পারে, আর কালীঘাটের বাসভবনটি 'ঘর'। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁহার উপযুক্ত স্থানেই বাস করিতে হইবে। পূর্বসূরির পথ অনুসরণ না করিলেই নূতন মুখ্যমন্ত্রী ভাল করিবেন। কিছু কিছু বিষয়ে পরিবর্তন শ্রেয়।

সম্পাদক সমীপেষু...

আর সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা?

মৃণাল সেন ('আমি কার্ডহোল্ডার নই...', ১৪-৫) সি পি এম দলকে সমর্থন করতেই পারেন। কিন্তু বামফ্রন্ট আমলে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা তুলে ধরেছেন তা নিয়েই কিছু কথা। তিনি বলেছেন, "এই দলটি কখনওই আমার স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকায় হস্তক্ষেপ করেনি।" এটা মনে রাখার মতো কথা। বলেছেন, "যে গণতান্ত্রিক আচরণ বা ডেমোক্র্যাটিক স্পেস নিয়ে একজন সাধারণ মানুষ বাঁচতে চায় সেই গণতন্ত্র পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বামফ্রন্ট শাসনকালে আমি পেয়ে এসেছি। গণতন্ত্রের এটাই দস্তুর।" প্রণিধানযোগ্য কথা।

ঘটনা হল, এমন কথা বলাই বাহুল্য বামবাংলায় অনেকেই বলতে পারেন। এবং তা ঠিক। 'সেই গণতন্ত্র পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বামফ্রন্ট শাসনকালে' আপনার মতো অনেকেই পেয়েও এসেছেন। প্রশ্নটা হল, যাঁরা 'সেই গণতন্ত্র' পাননি তাঁদের ক্ষেত্রে 'ডেমোক্র্যাটিক স্পেস' কী হবে? এই দলটি অনেকেরই স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকায় হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু যাঁদের বেঁচে থাকায় হস্তক্ষেপ করেছে? কারও ক্ষেত্রেই স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকায় হস্তক্ষেপ করেনি বলেই কি আপনার বিশ্বাস? ভলতেয়ার তো একজন মানুষেরও বিরুদ্ধ মত রক্ষার জন্য অঙ্গীকার করার কথা বলেছিলেন। আর আপনি নিজে বাম জমানায় 'ডেমোক্র্যাটিক স্পেস' পেয়েই বলে ফেললেন, 'সহজ স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ জীবন পেয়েছে সাধারণ মানুষ এই বামফ্রন্টের আমলেই।' যে কোনও শাসনে এমনকী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও আপনার মতো প্রতিষ্ঠিত মানুষের অনেকেই এমন কথা বলতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথাও কি তা-ই?

গ্রামবাংলায় যাঁরা বাম সমর্থন না-করায় গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, যাঁদের বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে তাঁরাও কি আপনার মতো বলতে পারবেন, তাঁদের স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকায় কেউ হস্তক্ষেপ করেনি? যে রিকশাওয়ালাকে শুনতে হয়েছে, মিছিলে না-গেলে কাল থেকে স্ট্যাণ্ডে দাঁড়াতে পারবি না, তারাও কি আপনার মতো বলতে পারবে, তাদের স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকায় কেউ হস্তক্ষেপ করেনি?

আমরা-তোমরার রাজনীতি কি গণতন্ত্রের দস্তুর? আমরা ২৩৫ আর ওরা ৩৫ উক্তি কি গণতন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী? আপনার কথা প্রকাশের পর দিনের আনন্দবাজারেই প্রকাশিত, প্রেসিডেন্সির এক অধ্যাপক চাঁদা দিতে রাজি না-হওয়ায় তাঁকে শুনতে হয়েছিল, 'দেবে না মানে? কী ভেবেছ তুমি?' পরের কথাগুলো কী হতে পারে চলচ্চিত্র সংলাপ লেখায় অভিজ্ঞ পরিচালক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এই সব আচরণ কি 'গণতন্ত্রের দস্তুর' বলে মনে হয়? তেমন ঘটনা কি বামবাংলায় হামেশাই সর্বত্রই মানুষের স্বাধিকারকে বিপন্ন করেনি? দম্ভ অহংকার আর হুমকির পরিবেশ কি ক্রমাগতই মানুষী অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলেনি?

এই নির্বাচন যে অপমানিত মানবসত্তার ধিক্কার তা যদি বুঝতে না-পেরে থাকেন, তা হলে সবিনয়ে বলব, 'আকালের সন্ধানে' চলচ্চিত্রে শহরের মানুষ গ্রামকে বুঝতে পারেনি বলে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে এসেছিলেন যে পরিচালক তিনি 'গণতন্ত্রের সন্ধানে' চলচ্চিত্র করতে গেলে সেই বুঝতে না-পারার জন্যই তাঁকে আবার ফিরে আসতে হবে।

গণতন্ত্র কেবল 'আমাদের' জন্য হয় না। কেবল 'গুণিজনদের জন্য' হয় না। কেবল 'কতিপয়ের জন্য' হয় না। গণতন্ত্র হয় সকলের জন্য। তা বামেরাই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বামেরাই তা ডানেদের থেকে বেশি ভঙ্গ করেছে। এ দেশে, বিদেশেও।
সমীরণ মজুুমদার। কলকাতা-৭৪


রাস্তাঘাট ব্রিজ ও গণহত্যা

এক দিকে পরিচিত বামপন্থী মৃণাল সেন ও অন্য দিকে লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত অসহায় পশ্চিমবঙ্গবাসীর উপলব্ধ সারসত্য।— উপলব্ধি দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।

দু'একটা প্রশ্ন করা উচিত হবে কি? 'বিতর্কিত বেয়াড়া বিষয়' তো অনেক ছিল— কিছু কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজের সঙ্গে প্রচুর গণহত্যা, অসংখ্য গরিবের গৃহদাহ, ধর্ষণ, হাত কেটে নেওয়া, নির্মম পুলিশি পীড়ন...অতবড় একজন প্রতিবাদী পরিচালকের কাছে সে সবও 'জুরিসডিকশনের সীমানার ধারে কাছে নেই'?

যোগ্য মানুষের স্বাধীনতা এই ফ্রন্টের আমলেই সবচেয়ে অবহেলিত। স্মরণ করা যাক উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যের কথা। কী ভয়ানক মানসিক নিপীড়ন। আমাদের সৌভাগ্য মৃণালবাবুর সে অভিজ্ঞতা হয়নি। উৎপল দত্তকেও তার মুখোমুখি হতে হয়নি। কেন, সে কথাও কি বুঝিয়ে বলতে হবে? 'হার্বার্ট' চলচ্চিত্র কিংবা 'পশুখামার' নাটকের পরিচালক সেই সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা পেয়েছিলেন কি?
অরুণ চট্টোপাধ্যায়। হাওড়া-১


সাঁকরাইল

আরামবাগে 'খুন', নেতাকে মারধর

নিজস্ব প্রতিবেদন

কোথাও খুন করে গাছে টাঙিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, কোথাও নেতাকে ধরে বেধড়ক মার। কোথাও আবার বোমাবাজিতে আহত স্কুলছাত্র। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের দু'দিন পরেও 'বদলা'র রাজনীতি অব্যাহত। অভিযুক্ত শাসক ও বিরোধী দুই পক্ষই।

দীর্ঘ দিন পরে হুগলির আরামবাগ হাতছাড়া হয়েছে সিপিএমের। রবিবার সকালে সেখানেই গৌরহাটি ১ পঞ্চায়েতের খালোড় গ্রামে বাবলা গাছ থেকে দড়ির ফাঁসে ঝুলতে দেখা যায় এক তৃণমূল কর্মীর দেহ। নাম মহেশ পণ্ডিত (৩০)। স্থানীয় সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি সিপিএম করতেন, পরে শিবির বদলান। শনিবার রাতে ছেলের জন্য দুধ আনতে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। সিপিএমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে ৩০ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীও বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, এটি খুনের ঘটনা।"

সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য বাদল রানাকে মারধরের পর রক্তাক্ত
অবস্থায় এলাকায় ঘোরানো হয়। — নিজস্ব চিত্র

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই অস্ত্র উদ্ধার এবং সিপিএম নেতাদের উপরে হামলার জেরে উত্তপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুর। এ দিন সাঁকরাইলে কুলটিকরি লোকাল কমিটি অফিসে 'সশস্ত্র শিবির' চালানোর অভিযোগে গাছে বেঁধে মারধর করা হয় সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বাদল রানাকে। মারতে মারতে রক্তাক্ত অবস্থাতেই তাঁকে এলাকায় ঘোরানো হয়। তাঁর দাদা, তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য অচিন্ত্য রানা করজোড়ে ভাইয়ের প্রাণভিক্ষা করতে থাকেন। পরে যৌথ বাহিনী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

কুলটিকরিরই লাউদহ অঞ্চলের ঢেরাছাড়ায় আবার সিপিএমের লোকজন তৃণমূল সমর্থকদের লক্ষ করে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। ছ'জন জখম হন। তার মধ্যে দু'জন স্কুলপড়ুয়াও রয়েছে। সকলেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি। সিপিএম নেতাকে পেটানো ও বোমাবাজির পুলিশ সিপিএম ও তৃণমূলের মোট ৯ জনকে আটক করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরেও পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া গ্রামে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহির বাড়ির সামনে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে তৃণমূলের দাবি, নেহাতই বাজি ফাটানো হচ্ছিল।

গণ্ডগোল হয়েছে বর্ধমানের রানিগঞ্জ, পুরুলিয়ার পাড়া ও মুর্শিদাবাদের কান্দিতেও। রানিগঞ্জে তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির পক্ষে 'সম্মানহানিকর' ব্যানার লাগানোর অভিযোগে পথ অবরোধ করে তৃণমূল। পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধ হটিয়ে দেয়। দুপুরে আবার পাড়া-য় কংগ্রেস-তৃণমূলের বিজয় মিছিলে লাঠি-রড নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তবে সিপিএমের দাবি, জোর করে সবুজ আবির মাখানোর জেরেই ঝামেলা বেধেছিল। পুলিশ দুই দুই সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। কান্দির রাজ কলেজে পার্ট ওয়ান পরীক্ষার টাকা জমা নিয়ে ছাত্র সংঘর্ষের জেরে জখম হন অধ্যক্ষ রবিউল হক। মার খান ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দেব ঘটক। পুলিশ তিন এসএফআই সমর্থককে আটক করেছে।

তবে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে 'অসংযত' আচরণের অভিযোগ তুলছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরুপম সেন বলেন, "রাজ্যপালের শান্তির আবেদনে কাজ হচ্ছে না। নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের কর্মীদের উপরে এবং পার্টি অফিসে ধারাবাহিক হামলা হচ্ছে। এ দিনও পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতির বাড়িতে হামলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে যে কোনও ঘটনা ঘটতে পারত। যদিও তৃণমূল নেত্রী বলছেন, তিনি শান্তি চান। কিন্তু নীচের কর্মীদের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শান্তি রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।"

সাঁকরাইলে গণ্ডগোলের পরে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও অভিযোগ করেন, "তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব কর্মীদের সংযত হতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রমাণ হল, ওঁরা মুখে এক রকম বলেন, কাজ করেন তার বিপরীত।" তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, "জনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে জনরোষে আক্রান্ত হয়েছেন বাদলবাবু। আমাদের লোকজনের হস্তক্ষেপেই তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।"

স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরীতে বেড়িয়ে শনিবার রাতেই ফিরেছিলেন বাদল রানা। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ দলীয় কর্মীদের নিয়ে লোকাল কমিটি অফিসে যাওয়ার পথে কয়েক জন তাঁর পথ আটকায়। হাতাহাতি বাধে। তৃণমূলের অভিযোগ, বাদলবাবুর এক সঙ্গী শূন্যে গুলি ছোড়ে। তার পরেই 'জনতা' খেপে ওঠে। স্থানীয় এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন লাগানো হয় দলের কর্মী-সমর্থকদের একটি মোটরবাইক ও কয়েকটি সাইকেলে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন রাস্তা আটকে রাখায় যৌথ বাহিনী আসতে দু'ঘণ্টা লেগে যায়। তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

আরামবাগে আবার পুলিশের 'ভূমিকা' নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। মৃতের বাড়ির লোকের দাবি, দল বদলানোয় তাঁর উপরে অনেকের রাগ ছিল। এ দিনই আরামবাগে গিয়ে পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ অভিযোগ করেন, গত ১৫ জানুয়ারি মহেশকে মারধর করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাঁর সংযোজন, "এ বারও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিল। সব শুনে দিদি আমায় পাঠিয়েছেন।" আরামবাগের সিপিএম নেতা বিনয় দত্ত অবশ্য বলেন, "আমাদের লোকজন সকলেই ঘরছাড়া। খুন হয়ে থাকলে তা ওদের নিজেদের ঝগড়াঝাটির জন্যই হয়ে থাকতে পারে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে সব জানা যাবে।"

প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, খুন

বাবলা গাছে ঝুলন্ত দেহ তৃণমূল কর্মীর

নিজস্ব সংবাদদাতা • • আরামবাগ

বিবার সকালে আরামবাগের গৌরহাটি ১ পঞ্চায়েতের খালোড় গ্রামে বাবলা গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখা যায় এক তৃণমূল কর্মীর দেহ। মহেশ পণ্ডিত (৩০) ওরফে গারু নামে ওই ব্যক্তিকে সিপিএম 'পরিকল্পনামাফিক' খুন করেছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। থানায় লিখিত নালিশ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে সিপিএম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে শিশুপুত্রের জন্য দুধ আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মহেশবাবু। আর ফেরেননি। সকালে তাঁর দেহ গাছে ঝুলতে দেখা যায়। স্থানীয় মানুষের দাবি মতো পুলিশ কুকুর আনা হয়। দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, "এটি পরিষ্কার খুনের ঘটনা।"

মহেশবাবুর শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

দলীয় কর্মীকে খুনের খবর পেয়ে আরামবাগে আসেন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ, বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত প্রমুখ। ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। পরে থানায় আসেন। রচপালের অভিযোগ, গত ১৫ জানুয়ারি মহেশবাবুকে মারধর করা হয়েছিল। সে সময়ে পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয়নি। মন্ত্রী বলেন, "এ বারও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিল। সব শুনে দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে পাঠান।" নিহতের পরিবারের পাশে দল আছে বলে আশ্বাস দেন রচপাল।

এ বিষয়ে আরামবাগের সিপিএম নেতা বিনয় দত্ত বলেন, "আমাদের দলের লোকজন সকলেই ঘরছাড়া। খুন হয়ে থাকলে তা ওদের দলের নিজেদের ঝগড়াঝাটির জন্যই হতে পারে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে সব জানা যাবে।"

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পেশায় দিনমজুর মহেশবাবু আগে সিপিএম করতেন। গত লোকসভা ভোটের পরে যোগ দেন তৃণমূলে। তারপর থেকেই তাঁর উপরে সিপিএমের লোকজনের রাগ ছিল বলে পারিবারিক সূত্রের খবর। মহেশবাবুর দুই সন্তান। বড়টির বয়স বছর আড়াই। ছোটটি আট মাসের। আর্থিক অনটনের সংসার হলেও এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি। বিধানসভা ভোটে গ্রামের বুথে ১৬৫ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে। সাইকেল খোওয়া যায়। সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে সে সময়ে।

মহেশের বাবা নন্দলালবাবু বলেন, "পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেটাকে মেরে দিল সিপিএম। ছেলে বলত, এত দিন তো দেখলাম সিপিএম করে। দেখি না, তৃণমূল করে কী পরিবর্তন আসে। গ্রামের সমস্ত গরিব মানুষকে সে-ই তো এককাট্টা করেছিল। এখন আমাদের পরিবারটার কী হবে!" মহেশের স্ত্রী মিতা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "স্বামী আত্মহত্যা করার লোক ছিলেন না। হাতে টাকা না থাকলে ধারদেনা করেও ছেলের দুধ কিনে আনতেন।"

পরিবার সূত্রের খবর, শনিবার দিনমজুরি করে বেলা আড়াইটে নাগাদ বাড়ি ফিরেছিলেন মহেশ। সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে মিটিং আছে। ছেলের দুধ কিনে দিয়েই বেরোবেন। সেই মতো সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান। রাত ১২টাতেও না ফেরায় পাড়ার লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ভোরের দিকে, গ্রামের পূর্ব দিকে মাঠের মধ্যে একটি বাবলা গাছে গলায় ছাগল বাঁধার দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো দেহ ঝুলতে দেখা যায় মহেশবাবুর। গাছের নীচে আরও একটি একই রকম দড়ি খোঁটা-সহ পড়ে ছিল। মহেশবাবুর পায়ে জুতো ছিল না। মাঠেও জুতোর খোঁজ মেলেনি। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মহেশবাবুর যৌনাঙ্গে এবং হাতে আঘাতের চিহ্নও আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশ এটিকে নিছকই আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালাতে চেয়েছিল। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ জনতা দেহ নামাতে বাধা দেন। পুলিশকে ঘেরাও করেন উত্তেজিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ-কুকুর আনার দাবি ওঠে। বেলা ১টা নাগাদ পুলিশ-কুকুর আনা হয়। ঘটনাস্থলে বাহিনী নিয়ে পৌঁছন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাসও। আগেই এসেছিলেন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট গোপাল রানা। সিপিএমের শ্রীকান্ত মল্লিক, ইন্দ্র মল্লিক-সহ ৩০ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মিতাদেবী। ত্রাণের জন্য প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে তাঁদের আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন রচপাল। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে সুষ্ঠু ভাবে ময়না-তদন্তের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। মন্ত্রী পরে বলেন, "আমরা দলগত ভাবে মৃতের পরিবারের পাশে থাকব। আরামবাগ মহকুমার সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দিকেও বিশেষ নজর থাকবে। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে আরও সক্রিয় হতে বলেছি পুলিশকে।"

আম কুড়োতে গিয়ে বোমা ফেটে মৃত কিশোর, জখম দুই

নিজস্ব সংবাদদাতা • ত্রিবেণী

তিন কিশোর গিয়েছিল আম কুড়োতে। আমবাগানে ঢোকার আগে তারা কুড়িয়ে পায় একটি ব্যাগ। আর সেই ব্যাগে রাখা টিফিনবাক্স খুলতে যেতেই বিস্ফোরণ। প্রাণ গেল এক কিশোরের। গুরুতর জখম তার দুই সঙ্গী।

রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে হুগলির গঙ্গাঘেঁষা ত্রিবেণী টিস্যু কারখানার জেটিঘাটের কাছে। মৃত অমিত রাজভর (১৪) এবং তার দুই সঙ্গী রাহুল প্রসাদ ও মোরাপ্পানা কৃষ্ণরাও স্থানীয় চন্দ্রহাটি বাজার এলাকার বাসিন্দা। রাহুলের বাঁ হাত কনুইয়ের নীচ থেকে উড়ে গিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, "ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারা, কী উদ্দেশ্যে বোমাভরা ব্যাগ ফেলে গিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।"

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম দুই কিশোর।— তাপস ঘোষ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অমিতরা ওই কারখানা লাগোয়া আমবাগানে আম কুড়োনোর পরিকল্পনা করেছিল। বাগানটি পাঁচিলঘেরা। পাঁচিলের পাশ দিয়ে হাঁটার সময়ে হঠাৎই গঙ্গার পাড়ে ব্যাগটি তাদের নজরে পড়ে। কৌতূহলবশত অমিত ব্যাগটি তোলে। টিফিন বাক্সটি ভিতরেই ছিল। বাক্সটি খুলতেই বিস্ফোরণ। বিকট শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েছে তিন কিশোরই। অমিতের সারা শরীর বোমায় ঝলসে যায়। বছর বারোর রাহুলের কনুইয়ের নীচ থেকে বাঁ হাত উড়ে যায়। শরীরের নানা জায়গাতেও আঘাত লাগে। বছর পনেরোর মোরাপ্পানার ডান হাত, বাঁ পা-সহ দেহের বিভিন্ন অংশ জখম হয়েছে। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অমিতের মৃত্যু হয়। অন্য দু'জনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাহুলকে পরে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। মগরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

দুপুরে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মোরাপ্পানা বলে, "আমরা তিন জন আম পাড়তে গিয়েছিলাম। জেটির কাছে গিয়ে দেখি, একটা ব্যাগ পড়ে রয়েছে। অমিত ব্যাগ খুলে টিফিন বাক্স বের করে। ভিতরে কি আছে, তা দেখতে যেতেই প্রচণ্ড শব্দে টিফিন বাক্সটা ফেটে যায়। আমরা ছিটকে পড়ি। তার পরে কিছু মনে নেই।"

স্থানীয় বাসিন্দা অনিল মিশ্র বলেন, "আচমকা প্রচণ্ড আওয়াজ পাই। গিয়ে দেখি, তিনটে ছেলেই রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ছটফট করছে।" স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বরূপ সরকার বলেন, "আমাদের মনে হয়, পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ভয় পেয়ে গিয়ে দুষ্কৃতীরা ওখানে বোমা ফেলে গিয়েছিল। যার বলি হতে হল ছোটদের!"

অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে লকবাজারে

নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া

ল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যাচ্ছে উলুবেড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র লকবাজারের প্রায় ২০ ফুট রাস্তা জুড়ে। দুর্ভোগে পড়ছেন ব্যবসায়ী এবং পথচারীরা। নোংরা জলে পা ডুবিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে জল ঢুকে যাচ্ছে দোকানে। রাস্তার ধারে নিকাশি ব্যবস্থা না-থাকার ফলেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। তাঁদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হলেও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।

ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই কোনও নিকাশি নালা নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই রাস্তায় জল জমছে ৬ মাস ধরে। কেননা, তার আগে ওই রাস্তার অদূরে মেদিনীপুর খালের উপরে একটি সেতু তৈরি করে পূর্ত (সড়ক) দফতর। একই সঙ্গে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। ঢাল ঠিকমতো না-হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি। আগে জল জমলেও দ্রুত সরে যেত। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। ব্যবসায়ী প্রবীর জানার অভিযোগ, "রাস্তাটি তৈরির সময়ে ঠিকাদারকে নিকাশি নালা তৈরির কথা বলা হয়েছিল। তিনি কর্ণপাত করেননি। পুরসভাকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।"

ছবি: হিলটন ঘোষ

ওই রাস্তাতেই রয়েছে উলুবেড়িয়া বয়েজ হাইস্কুল এবং উলুবেড়িয়া গার্লস হাইস্কুল। বয়েজ হাইস্কুলের শিক্ষক বিজনকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "জমা জলের কারণে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত করতে সমস্যা হয়।"

এলাকাটি উলুবেড়িয়া পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আব্বাস খান বলেন, "নিকাশি গোটা উলুবেড়িয়ারই প্রধান সমস্যা। বহু দিন আগে ওই এলাকায় রাস্তার ধারে নর্দমা ছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিকাশি ব্যবস্থা যাতে ফের গড়ে তোলা যায়, তার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" পুরপ্রধান তৃণমূলের দেবদাস ঘোষ বলেন, "পূর্ত (সড়ক) দফতরের গাফিলতিতেই এই কাণ্ড হয়েছে। শীঘ্রই ওদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। ওরা না করলে পুরসভাই ওখানে নিকাশি নালা বানাবে।" মহকুমা পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

No comments: